ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অর্থের বিনিময়ে চাকরি, লেনদেনের দায়ে বহিষ্কার!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০১ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৯
অর্থের বিনিময়ে চাকরি, লেনদেনের দায়ে বহিষ্কার! র‌্যাবের হাতে আটক প্রতারক গোলবার হোসেন ওরফে শ্রাবণ

ঢাকা: দুই-পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) ফিল্ড অফিসার পদে চাকরির আশ্বাস। কেউ আগ্রহী হলেই নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে দেওয়া হতো ভুয়া নিয়োগপত্র। প্রথমদিকে বিশ্বাস অর্জনের জন্য ২-১ মাস ওই চাকরিপ্রাপ্ত ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতনের নামে কিছু টাকাও পাঠানো হতো। তবে অফিসিয়াল আদেশ বা যেকোনো নির্দেশনা পাঠানো হতো ই-মেইলে।

এভাবে কয়েকমাস পর চাকরি স্থায়ী করার জন্য আরো টাকা দাবি করা হয়। এছাড়া পরিচিতদের চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চাকরিপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাধ্যমেও আদায় করা হতো টাকা।

এর কিছুদিন পর চাকরির নামে লেনদেনের অভিযোগ এনে ই-মেইলে বরখাস্তপত্র পাঠানো হতো।

নিয়োগপত্র দেওয়া থেকে শুরু করে বরখাস্তপত্র দেওয়া পর্যন্ত পুরো কাজটি এভাবেই খুব নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতেন গোলবার হোসেন ওরফে শ্রাবণ (২৮) নামে এক প্রতারক। যিনি নিজেকে একটি বাহিনীর প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে প্রতারক গোলবারকে আটক করে র‌্যাব-৩।

চাকরির নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এ প্রতারককে শনিবার (২৫ মে) আটকের বিষয়টি জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এমরানুল হাসান।

তিনি জানান, গত ২৩ মে ফারজানা আক্তার (২০) নামে এক নারী গোলবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। গোলবার এনএসআই’র ফিল্ড অফিসার নিয়োগের কথা বলে আগ্রহীদের কাছ থেকে ২-৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো। এরপর এনএসআই’র মহাপরিচালকের স্বাক্ষর জাল করে ও অ্যাপসের মাধ্যমে QR ID নাম্বারসহ ভুয়া নিয়োগপত্র দিতো। বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য চাকরিপ্রাপ্তদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতনের নামে কিছু টাকা এবং বাসায় কারো মাধ্যমে রেশন পাঠাতো। একপর্যায়ে চাকরি স্থায়ীকরণের কথা বলে আরো টাকা চাইতেন গোলবার।

এছাড়া চাকরিপ্রাপ্তদের মাধ্যমে তাদের আত্মীয়দেরকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা আদায় করতো। এরপরই অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে চাকরিপ্রাপ্তদের বরখাস্তপত্র পাঠানো হতো। প্রতারক গোলবার [email protected] ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলো।
 
ভিকটিম ফারজানা তার অভিযোগে জানান, এনএসআই’র ফিল্ড অফিসার পদে চাকরির আশায় গোলবারকে দেড়লাখ টাকা দেন। গত ৩০ জানুয়ারি ডাকযোগে তিনি একটি নিয়োগপত্রও পান। এরপর গোলবার ভিকটিমের মোবাইলে [email protected] এই নামে একটি ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খুলে দেন এবং ওই ই-মেইলের মাধ্যমেই তার কাজে যোগদান, বেতন, রেশন, সরকারি নির্দেশনাসহ যাবতীয় যোগাযোগ করা হবে বলে জানান। ওই ই-মেইলে [email protected] থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের নিদের্শনা আসতো। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর ভিকটিমের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এপ্রিল ও মে মাসের বেতন বাবদ ২৮ হাজার টাকা, ফিল্ডে তথ্য সংগ্রহের যাতায়াত খরচ বাবদ মোবাইল অ্যাকাউন্টে ৩ হাজার ৯০০ টাকা এবং এবং মার্চ/এপ্রিল/মে মাসের রেশন বাবদ চাল-২৪ কেজি, ডাল-৩.৫ কেজি, আটা-২০ কেজি, চিনি-৩.৫ কেজি, তেল-৫ লিটার, লবণ-২ কেজি তার বর্তমান ঠিকানায় পাঠানো হয়।
 
বিষয়টি সন্দেহ হলে এ বিষয়ে অবহিত করলে প্রতারক গোলবারকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে ১০টি নিয়োগপত্র, এনএসআই, এমইএস, ৩টি সিল, ভুয়া পরিচয়পত্রসহ প্রতারণার বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।