ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নদীপাড়ের বাণিজ্যকেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী উৎরাইল হাট!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
নদীপাড়ের বাণিজ্যকেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী উৎরাইল হাট! উৎরাইলের হাট। ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: উৎরাইল হাট; মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার একটি প্রাচীন হাটের নাম। উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের উৎরাইল গ্রামে দুই শতাব্দী আগে এ হাটের প্রচলন শুরু হয়। সাপ্তাহিক হাট বসে মঙ্গলবার।

দীর্ঘকাল ধরে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে উৎরাইল হাট। এ হাটের ওপর নির্ভর করে গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ী ছাড়াও হাটের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছেন দিনমুজুরসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সপ্তাহের মঙ্গলবার এলেই উৎরাইল গ্রামসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যায় হাটকে ঘিরে। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের বাণিজ্যকেন্দ্র এই উৎরাইল হাট।

প্রায় ২শ’ বছর আগে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের উৎরাইল গ্রামের আড়িয়াল খাঁ নদের তীরে গড়ে ওঠে এ হাট। ১৯৯৭ সাল থেকে আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনের কবলে পড়ে হাটটি। একাধিকবার ভাঙনের কবলে পড়ে বর্তমানে আড়িয়াল খাঁ নদের তীরেই স্থায়ীভাবে রয়েছে হাটটি। উৎরাইলের হাট।  ছবি: বাংলানিউজসরেজমিনে পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের উৎরাইল গ্রামের কোলঘেঁষে উত্তর-দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত রয়েছে আড়িয়াল খাঁ নদী। কালের বিবর্তনে বর্তমানে নদী পথের বিভিন্ন স্থান শুকিয়ে যাওয়াসহ গতিপথের কিছুটা পরিবর্তন হয়ে পুরোনো স্মৃতি নিয়ে বয়ে চলেছে আড়িয়াল খাঁ। নদী পথে যোগাযোগের ভালো ব্যবস্থা থাকায় এক সময় মানুষের চাহিদার ভিত্তিতেই এ নদীর পাড়ে গড়ে ওঠে কেনা-বেচার কেন্দ্র। স্থানীয় মানুষের চাহিদার ভিত্তিতে প্রথম দিকে স্বল্প জায়গাজুড়ে বাণিজ্যের এই কেন্দ্র শুরু হলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে পরিধি। গড়ে ওঠে সাপ্তাহিক হাট। যেখানে স্থানীয়দের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের এক উপযুক্ত জায়গায় পরিণত হয়। নামকরণ হয় উৎরাইল গ্রামের নাম অনুসারে উৎরাইল হাট। এলাকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের এক অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয় উৎরাইল হাট।

ঠিক কত সালে উৎরাইল হাট গড়ে উঠেছে সেই ইতিহাস সঠিকভাবে জানা না গেলেও স্থানীয় ইতিহাস থেকে জানা গেছে, প্রায় ২শ’ বছর আগে কমপক্ষে ১০ একর ধানী জমির উপর স্থাপিত হয় এ হাট। আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে গড়ে ওঠে হাটের মূল ভিত্তি। তৎকালীন সময়ে উৎরাইল গ্রামের সমাজসেবী আমিন উদ্দিন আহমেদ, আদেল উদ্দিন আহমেদ, হাজী গহের উদ্দিন আহমেদ ও আজিম উদ্দিন আহমেদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জনগণের সুবিধার্থে স্থাপিত হয় ঐতিহ্যবাহী এ হাট। উৎরাইলের হাট।  ছবি: বাংলানিউজ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একাধিকবার ভাঙনের ফলে হাটের পুরোটাই বিলীন হয়ে যায় আড়িয়াল খাঁ নদীতে। এরপর মানুষের জমিতে-বসতবাড়ির আশেপাশে হাটের কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আবারো ভাঙনের কবলে পরে হাটটি। এরপরে বর্তমানে আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে উৎরাইল কৃষিব্যাংক-শিরুয়াইল সড়কের পাশেই উৎরাইল হাটের অবস্থান।

তৎকালীন সময়ে চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, টেকেরহাট, কালকিনি, ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের এক অন্যতম ব্যবসার কেন্দ্র ছিল এ হাট। বর্তমানে হাট থেকে নানা ধরনের পণ্য ঢাকার নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত যাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। বিশেষ করে পাট যাচ্ছে ঢাকার নারায়ণগঞ্জে এবং রবিশস্য যাচ্ছে বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের কাছে।

হাটে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, রবিশস্য, পাট, ধান-চাল, তালকাঠসহ সকল ধরনের কাঠ ও কাঠের তৈরি সামগ্রী, বেত ও বেতের তৈরি সামগ্রী, বিভিন্ন প্রকারের গাছের চারা, পোশাক, ওষুধ সামগ্রী, গো-খাদ্য, মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য সামগ্রীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পণ্যদ্রব্য কেনা-বেচা হয় বলে স্থানীয়রা জানান।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবজাল তালুকদারসহ একাধিক ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, উৎরাইল হাটটি বৃহত্তর ফরিদপুরের মধ্যে অন্যতম একটি হাট। ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য মূল সড়ক থেকে হাটের মধ্যে রয়েছে একাধিক পাকা সড়ক। যাতে করে পণ্যদ্রব্য সহজেই হাটের মধ্যে আনা-নেয়া করা যাচ্ছে। এই হাটকে কেন্দ্র করে হাজারো মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।