ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মাতামুহুরী সেতুতে একলেনে চলছে যানবাহন, যানজটে ভোগান্তি

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৯
মাতামুহুরী সেতুতে একলেনে চলছে যানবাহন, যানজটে ভোগান্তি মাতামুহুরী সেতু দিয়ে একলেনে যান চলাচল করায় যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এ রুট ব্যবহারকারীদের

কক্সবাজার: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ মাতামুহুরী সেতুটি দেবে যাওয়ার পর সেতুর উপরে একপাশে স্টিলের পাটাতন ও গার্ডার দিয়ে অনেকটা বেইলি সেতুর আদলে মেরামত করে যানবাহন চলাচল শুরু করা হয়েছে। তবে একলেনে সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল করায় সেতুটি পার হতেই লেগে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে জন সাধারণকে।

একইভাবে চার বছর আগে সেতুটি দেবে গেলে সেতুর গার্ডারের নিচে বালির বস্তা বসিয়ে কোনোরকমে দেবে যাওয়া ঠেকানো হলেও এবার তা সম্ভব হয়নি। তাই বুধবার (২২ মে) মধ্যরাত থেকে সাতঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকাল থেকে একলেনে যানবাহন চলাচল শুরু করা হয়।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত গতিতে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই দুই লেনেই যান চলাচল শুরু করা যাবে।  

স্থানীয়দের অভিযোগ, চার বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় মাতামুহুরী সেতুর উপর দিয়ে ১০ টনের বেশি ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে সাইনবোর্ড টানানো হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্যর পাশাপাশি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী গত দুই মাস ধরে সেতুটির নিচে এবং আশপাশ থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করে ওই সেতুর উপর দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সেতুটি আবারও দেবে যায়।

তাদের আশঙ্কা, এখন সেতুটির উপরের অংশে অতিরিক্ত লোহার পাটাতন বসিয়ে দেবে যাওয়া অংশের উপর দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হলেও সেতুর নিচ এবং আশপাশ থেকে বিপুল পরিমাণ বালি ও মাটি উত্তোলনের কারণে যেকোনো সময় এটি আবারও ধসে যেতে পারে। এতে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরনো মাতামুহুরী সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় এর দক্ষিণ পাশে ছয়লেনের দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় প্রায় চার মাস আগে। জাইকার অর্থায়নে ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (বাংলাদেশ) আওতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

বিদ্যমান পুরনো সেতু দিয়ে যান চলাচল সচল রাখতে সেতুটির দুই পাশে এক কিলোমিটার এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দুইবার লিখিতপত্র দেওয়া হলেও সেতুর নিচ থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সেতুর একেবারে কাছ থেকে এক্সেভেটর দিয়ে অবৈধভাবে বালু ও মাটি কাটা অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয়, ১০ চাকার ৩০টন ওজনের ডাম্পার ভর্তি করে এসব বালি ও মাটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সেই সেতুর উপর দিয়েই বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার অবৈধভাবে বালি ও মালি উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বাংলানিউজকে  বলেন, সেতু নির্মাণ কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ চিঠির আলোকে ওই স্থান থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা এ কাজটি করছে তারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, নির্দেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অসাধু কিছু লোকের কারণে যদি এত বড় ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাহলে ব্রিজ নির্মাণ কর্তৃপক্ষও চাইলে এদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে, যোগ করেন তিনি।  

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সেফটি সুপারভাইজার মো. শফিকুল আলম বাংলানিউজকে জানান, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ১০ টনের বেশি ওজনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও তা মানা হয়নি। তাই গত বুধবার মধ্যরাতে সেতুটির মাঝখানে দেবে যায়। তাই রাতারাতি স্টিলের পাটাতন ও গার্ডার দিয়ে বেইলি সেতুর আদলে দেবে যাওয়া অংশটি ঢেকে দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একলেনে যানবাহন চলাচল শুরু করা হয়। এতে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়।

তিনি বলেন, জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা যে একলেনে এখন গাড়ি চলাচল করছে, এটি আরো মজবুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যলেনের সংস্কার কাজও চলছে। আশা করছি আগামী দুই-একদিনের মধ্যে পুরোদমে যানবাহন চলাচল শুরু করা যাবে।  

স্থানীয় বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন হাসান শাহেদ বাংলানিউজকে জানান, সেতুতে মেরামত কাজ চলায় এবং একলেনে যানবাহন চলাচল করায় সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সেতু পার হতেই লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ সময়। যার প্রভাব এসে পড়েছে চকরিয়া স্টেশনেও। ফলে মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিকল্প হিসেবে মহাসড়কের বরইতলী রাস্তার মাথা থেকে পেকুয়া-বাঘগুজারা-লালব্রিজ-চৌঁয়ারফাঁড়ি থেকে চকরিয়া-বদরখালী সড়ক হয়ে পৌরশহরের চিরিঙ্গা থানা রাস্তার মাথা সড়ক দিয়ে অনেক যানবাহন কক্সবাজার প্রবেশ করছে। কিন্তু দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে ঘণ্টারও বেশি বাড়তি সময় লেগে যাচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইনপ্রোভমেন্ট প্রজেক্টেটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কোরাইশী বাংলানিউজকে বলেন, মাতামুহুরী সেতুটি প্রায় ৬০-৭০ বছরের পুরনো। দুর্বল হয়ে যাওয়ায় মাঝে মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়। বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে সওজ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সংস্কারের জন্য যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়।  

তিনি বলেন, এর দক্ষিণেই নতুন সেতু তৈরির কাজ চলছে। নতুন সেতুটির কাজ সম্পন্ন হলেই এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, একলেনে সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল করলেও যানজট সহনীয় রয়েছে। এছাড়াও যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেতুটির দুই প্রান্তেই পুলিশ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৯
এসবি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।