ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বোমা মেশিনে নদীর পাড় খুঁড়ে বাঁধ নির্মাণ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৯
বোমা মেশিনে নদীর পাড় খুঁড়ে বাঁধ নির্মাণ ধরলা নদী পাড়ে অবৈধ বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: খরস্রোতা ধরলা নদী পাড়ে অবৈধ বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন করে বন্যা নিয়ন্ত্রণে নির্মাণ করা হচ্ছে লালমনিরহাটের ধরলা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধ। ফলে আসন্ন বন্যায় নদী ভাঙনের শঙ্কায় এলাকাবাসী। 

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছরের ভয়াবহ বন্যা আর নদী ভাঙনে জেলা সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ইটাপোতা বনগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা ধরলার কড়াল গ্রাসে বিধ্বস্ত হয়। ক্ষেতের ফসল নষ্টসহ গৃহহীন হয়ে পড়েন এ এলাকার অসংখ্য মানুষ।

 

ধরলা নদীর ভাঙন থেকে জনপদ রক্ষায় পাউবো’র অধীনে কুড়িগ্রাম সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইটাপোতা ও বনগ্রাম এলাকায় ধরলার ডান তীরে ১ হাজার ৩৭৪ মিটার দীর্ঘ একটি বাঁধ নির্মাণে প্রকল্পিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩৮ দশমিক ৭৪ লাখ টাকা। এ বাঁধের কিছু অংশে মাটির কাজ হলেও বাকি অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধটি নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ নেন বেলাল কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।  

২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি কাজ শুরু হলেও বিভিন্ন অজুহাতে দুই দফায় সময় বাড়িয়ে চলতি মাসের ৩১ তারিখে শেষ করার কথা থাকলেও কাজ মাত্র ৭০ শতাংশ শেষ করতে পেরেছেন ঠিকাদার। এরই মধ্যে নদীর পাড় খুঁড়ে বালু তুলে ২৫ হাজার ২০০ জিও ব্যাগ প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন বাকি রয়েছে জিও ব্যাগগুলো বসানোর কাজ। বর্ষা আসার আগে জিও ব্যাগ বসানো না হলে পুরো বাঁধ নদীর স্রোতে ধসে যাওয়ার শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।  

নদীর পাড় খুঁড়ে বালু তুলে জিও ব্যাগ প্রস্তুত।  ছবি: বাংলানিউজএদিকে ওই প্রকল্পের আওতায় ওই বাঁধ থেকে ওয়াব্দা বাজার পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি প্রসস্থ করণে মাটি ভরাটের কাজ দেওয়া হয়। সেখানে বাঁধটি প্রস্থ ৪ দশমিক ৩ মিটার দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা করা হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এ ক্ষেত্রের আগের বাঁধটির ওপর কিছু বালু ফেলে দায়সারা কাজ করা হচ্ছে। এ জন্য নদীর কিনারেই বসানো হয়েছে দুইটি বোমা মেশিন। ফলে বর্ষা শুরু হলেই আবারও ভয়াবহ ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন নদীর তীরবর্তী মানুষ। আর এভাবে বালু দিয়ে তৈরি করা বাঁধ সামান্য পানিতেই আবারও নদীতে গড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় স্থানীয়রা।

ধরলা পাড়ের বাসিন্দরা বাংলানিউজকে জানান, গত বছরে নদীর ভাঙনে চোখের সামনে অনেকের বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়েছে। নদীর কিনারে বোমা মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় আবারও ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যা না আসতেই ভাঙতে শুরু করেছে নদীর পাড়। বোমা মেশিন পাড় থেকে না সরালে এ বাঁধ দিয়ে কোনো উপকারে আসবে না বলেও দাবি করেন তারা।  

এ কাজের তদারকি কর্মকর্তা লালমনিরহাট পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নদীর পাড় থেকে বোমা মেশিন সরিয়ে নদীর মধ্যবর্তী এলাকায় বসাতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। তাকে নিষেধ করার পরও এমনটি করেছেন। মেশিন না সরালে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।  তবে ঠিকাদার মেশিন দূরবর্তী স্থানে নিতে সম্মতি দিয়েছেন।  
ছবি: বাংলানিউজ
লালমনিরহাট পাউবো’র উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মাটি না পাওয়ার কারণে পুরাতন বাঁধটির মাঝের অংশ কেটে নিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে এবং কেটে নেয়া মাটি পরবর্তিতে বাঁধের ওপরে দেওয়া হবে। তবে নদী পাড়ে বোমা মেশিন বসানোর বিষয়টির আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৯
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।