ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দিনাজপুরের সুস্বাদু লিচু এখন বাজারে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৯
দিনাজপুরের সুস্বাদু লিচু এখন বাজারে

দিনাজপুর: দিনাজপুরের লিচুর বিশেষ খ্যাতি দেশজুড়ে। টকটকে লাল রসালো লিচু জিহ্বায় জল আনে সহজে। সেই রসালো ও সুস্বাদু লিচু উঠতে শুরু করেছে দিনাজপুরের বাজারে, যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। 

লিচু বাজারে উঠতে শুরু করায় ব্যস্ত সময় পারছেন লিচু ব্যবসায়ী ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িতরা। জেলা থেকে গড়ে প্রতিদিন ১৫টিরও বেশি নৈশকোচের ছাদে লিচুর ঝুড়ি যাচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে।

 

দিনাজপুরের রসালো লিচু শুধু দেশ নয়, বিশ্বের অনেক দেশে চাহিদা রয়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম থেকে দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার কালিতলা নিউমার্কেটে সুস্বাদু লিচু উঠতে শুরু করেছে। দেশের বিখ্যাত বেদেনা ও চায়না থ্রি, চায়না ফোর জাতের লিচু রমজান মাসের শেষে বাজারে ওঠানোর চেষ্টা করছেন লিচু চাষে জড়িতরা।  

দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার কালিতলা নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় জাতের লিচু বাজারে উঠেছে। ভোরে বাগান থেকে লিচু ভেঙে বাজারে আনতে বেজে যায় ১১টা। এরপর শুরু হয় ক্রেতাদের আনাগোনা। কেউ লিচু বিক্রি করছেন, আবার কেউ লিচু ঝুড়িতে সাজাচ্ছেন বিভিন্ন স্থানে নিতে। স্থানীয় ক্রেতারা দেশি জাতের ১০০টি লিচু ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।  

শহরের নাবিল পরিবহনের অফিস সহকারী দীনেশ চন্দ্র বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন রাতে নাবিল পরিবহনের ৬টি কোচ ঢাকায় যায়। প্রতিদিনই প্রতিটি কোচের ছাদ বোঝাই করে লিচুর ঝুড়ি ঢাকায় যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক পর লিচুর ঝুড়ি পাঠানো আরও বাড়বে।

বাজারে পাওয়া যাচ্ছে দিনাজপুরের সুস্বাদু লিচু।  ছবি: বাংলানিউজ

বিখ্যাত বেদেনা, চায়না থ্রি ও চায়না ফোর লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিতি রয়েছে পুলহাট মাশিমপুর গ্রাম। মাশিমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লিচুচাষি ও বাগান মালিকদের দম ফেলার ফুরসত নেই। লিচু গাছের আড়ালে লাগানো হয়েছে ছোট সাইজের তেলের ড্রাম। পাহারাদাররা তেলের ড্রামগুলোর দড়ি ধরে টান দিয়ে শব্দ সৃষ্টি করছেন যাতে কাক, পাখি ও বাদুড় লিচু নষ্ট করতে না পারে।  

লিচুচাষি হাসান আলী বাংলানিউজকে জানান, তার তিনটি লিচু বাগানে ৭ একর ১০ শতক জমিতে প্রায় সাড়ে ৫শ লিচুর গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ চায়না থ্রি ও চায়না ফোর জাতের। অন্যান্য ১৫০ গাছ দেশি প্রজাতির মাদ্রাজি ও বোম্বাই লিচুর বাগান। তিনটি বাগান দুই বছরের জন্য ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন মুন্সিগঞ্জের ব্যবসায়ীর কাছে। তারা বাগান নেওয়ার পর থেকে ভালো ফলনের আশায় পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এবারে লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। স্থানীয় জাতের লিচু ভাঙতে শুরু করলেও ভালো জাতের লিচুগুলো ঈদুল ফিতরের পরে বাজারজাত করতে পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।  

লিচু বাগানের মালিক শিমুল কর্মকার বাংলানিউজকে জানান, তার পাঁচ একর জায়গায় দু’টি লিচুর বাগান রয়েছে। দু’টি বাগান ঢাকা-নরসিংদীর এক ব্যবসায়ীর কাছে দুই বছরের লিজ দিয়েছেন। দুই বছর পরপর ঢাকা বা অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে বাগানের লিজ নিয়ে লিচু চাষ করেন।  

নরসিংদী সদর উপজেলার লিচু ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, তিনি এবছর পুলহাটের মাশিপুর এলাকার দু’টি লিচু বাগান দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়েছেন। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লিচুর যে ফলন হয়েছে সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে শ্রমের মূল্য ভালোই পাওয়া যাবে।  

দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, এবার জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫ হাজার ২ হেক্টর লিচু বাগানে লিচু চাষ করা হয়েছে। মোট লিচু বাগান রয়েছে ৩ হাজার ২৬৭টি। এছাড়া মানুষের বসতবাড়ি ও অন্যান্য স্থানে থাকা লিচু গাছেও বাম্পার ফলন হয়েছে।  

এবার বেদেনা, হাইব্রিড জাতের চায়না থ্রি ও চায়না ফোর জাতের লিচু ব্যাপকহারে চাষ করা হয়েছে। এছাড়া দেশি জাতের মাদ্রাজি, বোম্বাই ও কাঁঠালি লিচু রয়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতেই মাদ্রাজি ও কাঁঠালি লিচু বাজারে উঠেছে। দেশি লিচুর দামও তুলনামূলক কম।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।