ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ঈদ সামনে রেখে নগরীতে বেড়েছে মৌসুমি ভিক্ষুকের সংখ্যা

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৩ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৯
ঈদ সামনে রেখে নগরীতে বেড়েছে মৌসুমি ভিক্ষুকের সংখ্যা

ঢাকা: ঈদকে সামনে রেখে হঠাৎ করেই নগরীতে বেড়ে গেছে মৌসুমি ভিক্ষুকের সংখ্যা। রাজধানীর ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে শুরু করে বিপণিবিতান, মসজিদ-মাজার এমনকি বিমানবন্দরের মানুষরাও ভিক্ষুকে বিব্রত।

সরেজমিন শহরের বেশকিছু এলাকায় দেখা যায়, হাত নেই, পা নেই, অন্ধ, কঙ্কালসার দেহ, অস্বাভাবিক বড় মাথা ও হাত-পা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘা এমন বেশ কিছু নারী, পুরুষ ও শিশু শহরময় ভিক্ষা করছে। কখনো কখনো এদের বহন করার জন্যও থাকে সুস্থ একজন লোক।

এছাড়াও সামান্য অঙ্গহানি বা সুস্থ দেহের মানুষও ভিক্ষুক সেজে ঘুরছে নগরীতে। তারা বিভিন্ন ক্ষতস্থান দেখিয়ে বা কোলে শিশু নিয়ে ভিক্ষা করে।

নগরীর ব্যস্ততম সড়ক থেকে শুরু করে পাড়ার অলি-গলি ও বাসায় বাসায় ভিক্ষা করছেন তারা। পুরো রাজধানীজুড়ে এখন মৌসুমি ভিক্ষুকের উপস্থিতি। আর জ্যামে পড়লে তো কথাই নেই, এক সঙ্গে অনেক ভিক্ষুক গাড়ি বা রিকশার সামনে পথ আটকে সাহায্য পাওয়ার আশায় হাত বাড়িয়ে দেন।

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার এক ভিক্ষুকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তিনি ভিক্ষা করেন ৭ম রোজা থেকে। নিয়মিত ভিক্ষুক নন তিনি। শুধু রমজান মাসেই ভিক্ষা করেন। এ মাসে মানুষ দান খয়রাত বেশি করেন বলে আয় রোজগার ভালো হয়।

প্রতি বছর রমজানকে উপলক্ষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন ভিক্ষুক আসতে শুরু করে রাজধানীতে। বিভিন্ন রাস্তা, ফুটওভার ব্রিজ, মসজিদ, মার্কেটের সামনে দেখা যায় এসব নতুন ভিক্ষুক। তাদেরই একজন শামিম। খালি গায়ে ভিক্ষা করছিলেন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের রাস্তায়। দশ রমজানে ঢাকায় এসেছে সে। বাড়ি ময়মনসিংহ।

কথা হলে শামিম জানায়, শুধু রমজান মাসেই ভিক্ষা করতে ঢাকায় আসে সে। বাকি সময়টা বাড়িতেই থাকে। তবে ঢাকায় নতুন ভিক্ষুকদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কারণ নতুন ভিক্ষুকদের ঈর্ষা করে পুরনোরা। যারা অনেকদিন থেকে ঢাকায় ভিক্ষা করে তারা নতুন ভিক্ষুকদের জায়গা দিতে চায় না। বসতে গেলে তাড়িয়ে দেয়। এ কারণে সে বেশিদিন এক জায়গায় বসতে পারে না। তবে ভিক্ষা করে প্রতিদিন তার ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হয়।  

বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়ে মানুষ ভিক্ষাবৃত্তিতে নামে। সাধারণত দারিদ্র, পারিবারিক অবহেলা, মনস্তাত্বিক কারণেই মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া দৃশ্যত যে সামাজিক উপাদানগুলো আমাদের দেশে ভিক্ষাবৃত্তির কারণ হিসেবে যেগুলো চিহ্নিত তা হলো- অতি নিম্ন আয়, ভূমিহীনতা, অশিক্ষা, বসতবাড়ির অভাব, জনসংখ্যার চাপ, নারীদের প্রতি নির্যাতন এবং তাদের পরিত্যাগ। এতো ভিক্ষুকের ভিড়ে বিপাকে সাধারণ মানুষ। কে প্রকৃত সাহায্য পাওয়ার যোগ্য তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

রাজধানীর মৌচাক, শাহবাগ, পল্টন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকা, শপিংমল, ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টসহ বেশকিছু জায়গা ঘুরে ভিক্ষুক ও দাতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের শুরু থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলার হতদরিদ্ররা জাকাতের টাকা সংগ্রহ কিংবা জাকাতের কাপড়ের আশায় রাজধানীতে আসছে। এমনকি উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভিক্ষার কাজে শিশুদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছরই ভিক্ষুকদের সংখ্যা বাড়ে। তবে ভিক্ষুক আটক কিংবা উচ্ছেদের বিষয়টি স্পর্শকাতর। তারপরও বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর ভিআইপি জোন ও সড়ক থেকে ভিক্ষুক আটক করা হয়। কিন্তু কিছুদিন জেলে থাকার পর তারা ছাড়া পেয়ে আবারও ভিক্ষা পেশায় চলে আসে। সঠিক পরিকল্পনা ও পুনর্বাসন ছাড়া তাদের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫১ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৯
এইচএমএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।