তিনি বলেছেন, (এমপি) সংখ্যার দিক থেকে নয়, (একটি দল) সংসদে অংশগ্রহণ করে শক্তিশালী ভয়েস রেইজ (জোরালো উচ্চারণ) করবে এটাই বড় কথা। এদিক বিবেচনায় আমার মনে হয় মির্জা ফখরুল পারপাসটা ভালোভাবে সার্ভ করতে পারতেন।
সোমবার (২০ মে) সেতু ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন কাদের। সুস্থতালাভের পর সেতু ভবনে সোমবারই প্রথম অফিস করলেন মন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাজের ক্যাপ্টেন, নৌকার মাঝি। তিনি জাহাজরূপী দেশটা চালানোর সুবিধার্থে কিছু পরিবর্তন এসেছে।
সংসদে মির্জা ফখরুলের যোগদান বিএনপির জন্য আবশ্যক ছিল জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে আমার মনে হয় এটা শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে যে, তারা সংসদে যোগ দিয়েছেন। গণফোরামের দু’জনও সংসদে এসেছেন। এই অংশগ্রহণ সংখ্যার দিক থেকে নয়, সংসদে যোগদান তাদের বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির পারপাস সার্ভ করার জন্য। যোগদানই যেহেতু করেছেন, সেহেতু ইফেক্টিভ, সবচেয়ে মিনিংফুল বক্তব্য রেখে তাদের বার্তাটা দেশ-বিদেশে সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মির্জা ফখরুলের যোগদানটা একেবারেই আবশ্যক ছিল। অন্যরা হয়তো তাদের ভয়েস সংসদে উত্থাপন করবেন, সোচ্চার হতে চেষ্টা করবেন। কিন্তু ভার-ভারত্বের দিক থেকে আমার মনে হয় মির্জা ফখরুল পারপাসটা ভালোভাবে সার্ভ করতে পারতেন। শক্তিশালী বিরোধী দলের দৃঢ়বার্তা তিনি দিতে পারতেন।
বগুড়া-৬ আসনে মির্জা ফখরুলের শূন্যস্থান নতুন বিএনপি প্রার্থী পূরণ করতে পারবে কি-না জানতে চেয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন আবার তারই শূন্যস্থানে আরেকজনকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেখানে তার চেয়েও যোগ্য ব্যক্তি কি আসবেন? মির্জা ফখরুলের চেয়েও কি শক্তিশালী কোন বার্তা নতুন ব্যক্তিটি সংসদে দিতে পারবেন এমন কেউ আসছেন? সেটাতো আমার মনে হয় না।
সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা শক্তিশালী অপোজিশনের (বিরোধী) আরও স্ট্রংগার ভয়েসই (দৃপ্ত উচ্চারণ) আশা করি। সরকার কোনো ভুল করলে তারা তা ধরিয়ে দেবে। আমরা সেখান থেকে শিক্ষা নেবো। তারা যদি রাজপথে আন্দোলন করে, আমরা তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবো। জনগণের জানমাল ধ্বংসের কোনো শঙ্কা থাকলে প্রশাসন প্রশাসনিকভাবে দেখবে।
কাদের অসুস্থ থাকাবস্থায়ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও মনিটরিংয়ে মন্ত্রণালয়ে কাজ অব্যাহত থেকেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমার অনুপস্থিতিতে কোনো কাজ থেমে নেই। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল প্রকল্প, ডিটিসিবি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ১ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথম আমার টেলিফোনে কথা হয়। তিনি আমার মন্ত্রণালয়, প্রকৌশলীদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আমি আমার সহকর্মীদের প্রশংসায় দারুণ উচ্ছ্বসিত হয়েছি। ভালোভাবে চললে, সৎভাবে চললে, মানুষের পাশে থাকলে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়। আমি মরে গেলে এটা বুঝতে পারতাম না।
নিজের কর্মতৎপরতার ব্যাপারে কাদের বলেন, আশা করছি দ্রুত কাজের গতি পাবো। আমার কাজের প্রতি উৎসাহ আরও বেড়ে গেছে। কমিটমেন্ট আরও জোরদার হয়েছে। দায়িত্ব পালনের তাগিদ আমি নতুনভাবে পেলাম। মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কোনো কিছু নেই, আমি তা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে শিখেছি। যেহেতু নিজের জীবন থেকে আমি এ শিক্ষা পেয়েছি, তাই সবাইকে বলবো মানুষের পাশে থেকে ভালোবাসা অর্জন করতে। মানুষের কাছে ক্ষমতা থাকলে তা অহংবোধ জাগিয়ে তোলে, কমিটমেন্ট থেকে দূরে রাখে।
সাংবাদিকরা সমালোচনার মাধ্যমে কাজে সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, কর্মকর্তারা যদি সৎ থাকেন তবে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে যায়। আমার মন্ত্রণালয়ের দু’জন সচিব সততার সঙ্গে কাজ করছেন। কারও বিরুদ্ধে তেমন কোনো বড় অভিযোগ আসেনি।
পদ্মার মূল সেতুতে ৭৬ শতাংশ, নদীশাসনে ৫৫ শতাংশ এবং সংযোগ সড়ক ১০০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মাসেতুর কাজের মোট অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসে অর্থায়নের জটিলতা কেটে গেছে।
শারীরিক অবস্থার বিষয়টি উল্লেখ করে কাদের বলেন, আমি আগের মতো হয়তো পারবো না। তবে এবারও বাস টার্মিনালে যাবো, যানজটের স্পটে যাবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৯
আরএম/এইচএ/