ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আন্দোলনে বন্ধ নরসিংদীর ২ পাটকল, শ্রমিকদের মানবেতর জীবন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১২ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
আন্দোলনে বন্ধ নরসিংদীর ২ পাটকল, শ্রমিকদের মানবেতর জীবন নরসিংদীর ২ পাটকল বন্ধ, শ্রমিকদের মানবেতর জীবন

নরসিংদী: দিনরাত পরিশ্রম করেও মিলছেনা শ্রমিকের প্রাপ্য মজুরি। সময় মতো বকেয়া পরিশোধ না করায় শ্রমিকদের কাছে এখন আর বাকিতে সদাই বিক্রি করছেনা দোকানদাররাও। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করছে নরসিংদীর ইউনাইটেড-মেঘনা ও চাঁদপুর ইউনিটে (ইউএমসি) জুট মিল ও পলাশ উপজেলার বাংলাদেশ জুট মিলের শ্রমিকরা। রমজান মাসে এ সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে তাই বাধ্য হয়ে আবারও বকেয়া মজুরি আদায়সহ ৯ দফা দারির আন্দোলনে নেমেছে শ্রমিকরা।

১৩ মে (সোমবার) থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছে পাটকল শ্রমিকরা। দাবি আদায়ে জুট মিলের প্রধান ফটকের সামনে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে তারা।

 

নরসিংদী ইউএমসি জুট মিলে (ইউনাইটেড-মেঘনা ও চাঁদপুর ইউনিটে) স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে কর্মরত রয়েছেন ৪ হাজার ৫৭৫ জন শ্রমিক। প্রতিদিন তিনটি ইউনিটে ১৯ টন পাটজাত দ্রব্য উৎপাদিত হয়। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।  

অন্যদিকে পলাশ উপজেলার ৫২০ তাঁতের বাংলাদেশ জুট মিলটিতে প্রায় তিনহাজার শ্রমিক-কর্মচারী কমর্রত রয়েছেন। এক সময় বাংলাদেশ জুট মিলটি দেশের অন্যতম লাভজনক জুট মিল ছিল। কিন্তু গত ৪ মাস ধরে পাওনা মজুরি পাচ্ছেন না এ দুই মিলের শ্রমিকরা। নতুন করে যোগ হয়েছে আরও ১১ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি। বকেয়া মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে শ্রমিকরা। অর্থের অভাবে অনেকেই সেহেরি না খেয়েই রোজা রাখছেন। তবে তিন বেলা সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে না পারায় যন্ত্রণা বেড়ে গেছে বহুগুণ। কেন্দ্র ঘোষিত পাটকল শ্রমিকদের প্রস্তাবিত মঞ্জুরি কমিশন বাস্তবায়ন, শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া মজুরিসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে পুনরায় আন্দোলনে নেমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিল ও বাংলাদেশ জুট মিলের শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ জুট মিলের ফিনিশিং বিভাগের শ্রমিক জামাল বাংলানিউজকে বলেন, ১১ সপ্তাহ ধরে আমাদের মজুরি না দেওয়ায় অতি কষ্টে জীবনযাপন করছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোমতে সেহেরি খেয়ে-না-খেয়ে রোজা রাখতে হচ্ছে আমাদের।

ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিক আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার ঈদের আগে বকেয়ো মজুরি পরিশোধের ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা এতদিন দোকান থেকে বাকিতে সদাই এনে সংসার চালিয়েছি। এখন সময় মতো বকেয়া পরিশোধ না করায় দোকানদাররা বাকিতে সদাই বিক্রি করছেনা। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছি।

পলাশের বাংলাদেশ জুট মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইউসুফ আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনকাটাতে গিয়ে আমাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই মিল বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলনা। বিজেএমসি কর্তৃপক্ষেও অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারণে মিলটি আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিজেএমসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ বিজেএমসি বিলুপ্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

নরসিংদী ইউএমসি জুট মিল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, সময়মতো পাট ক্রয় না করায় জুটমিল গুলোকে লোকসান  গুণতে হচ্ছে। আর এর মাসুল গুণতে হচ্ছে শ্রমিকদের। আমরা অবিলম্বে সরকারকে পাটকল শ্রমিকদের প্রস্তাবিত মঞ্জুরি কমিশন বাস্তবায়ন, শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া মজুরিসহ ৯ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাই।

নরসিংদী ইউএমসি জুট মিলের মহা-ব্যবস্থাপক গাজী শাহাদাত হোসেন বলেন, শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেই এক সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হবে। পাশাপাশি ঈদের আগে আরও এক সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হবে। তবে সব বকেয়া মজুরি দিতে হলে সরকার থেকে বরাদ্দ দিতে হবে। অন্যথায় মজুরি দেওয়া সম্ভব নয়।  

বাংলাদেশ সময়: ০১১০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯ 
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad