ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইফতার-সেহরি ভালো জোটে না, তবুও শুকরিয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৬ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৯
ইফতার-সেহরি ভালো জোটে না, তবুও শুকরিয়া রাজধানীর ছিন্নমূল মানুষের ইফতার, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ আলী। কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় বাম পায়ে আঘাত পাওয়ার পর থেকেই তাকে চলতে হয় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয় কেউ নেই তার। ফুটপাতই তার ঘরবাড়ি। এই সময়ে কিছু না মিললে শুধু পানি খেয়েই সারতে হয় তার সেহরি। এরপর সন্ধ্যায় ইফতারের অপেক্ষা।

বুধবার (১৫ মে) সন্ধ্যায় কথা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, রাতে শুধু পানি পান করে সেহরি করেছি। আর ইফতারের আগে কোনো মসজিদ বা মাজারে যাই।

সেখানে ইফতার করি। আমার মতো অনেকেই তা করে। কেউ যদি কিছু দেয়, তাতেই সারতে হয় ইফতার আর সেহরি। এছাড়া উপায়ও নেই। মিললে খাই, না মিললে ওভাবেই চলে।

শাহবাগের রিকশা চালক রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, রোজা রেখে কষ্ট করে রিকশা চালাই। যা আয় করি, তা দিয়ে ভালো ইফতার করলে বাড়িতে কী পাঠাবো। এজন্য ফুটপাত থেকে ছোলা-মুড়ি বা দু’একটা পিঁয়াজু-জিলাপি দিয়ে ইফতার করি। সামনে ঈদ। বাড়িতে টাকা নিয়ে যেতে হবে। বাড়তি খরচ করলেতো টাকা থাকবে না।

আর গুলিস্তানের ছিন্নমূল শিশু রাকিব বাংলানিউজকে বলে, মা ইফতারি বানায় না। মানুষে দেয়, তা দিয়ে আমরা সবাই খাই। মায়ের সঙ্গে আরও এক ভাই রয়েছে। পাওয়া খাবারগুলোই পরিবারে তিনজনে মিলে ভাগ করে খাই।

ছিন্নমূল মানুষ তারা। দিনরাত কাটে এখানে-সেখানে। ঝড়, বৃষ্টি, রোদে ফুটপাতের পাশে পলিথিন আর চটের ঘরে জীবনযাপন তাদের। কেউ ভিক্ষা করে, কেউ এটা-সেটা কুড়িয়ে বিক্রি করে। চলতে হয় কায়ক্লেশে, চেয়েচিন্তে। রমজানেও সেই একই চিত্র।

পুরো রমজানে তাদের সেহরি ও ইফতার সারতে হচ্ছে ফুটপাতে কিংবা মসজিদ-মাজারে। তাদের সেহরি আর ইফতারে কোনো আড়ম্বর নেই। যখন যেখানে সুবিধা হয় সেখানে। কিছু না মিললে কারও কারও শুধু পানি পান করেই সারতে হচ্ছে সেহরি। এরপর সন্ধ্যায় ইফতারের অপেক্ষা। আয়োজনও খুবই সামান্য। সামান্য মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু। এর জন্যও কতো হাপিত্যেশ। কখনও কখনও তা-ও মেলে না। ঢু মারতে হয় মসজিদ, মাজারে; যেখানে ইফতারের আয়োজন থাকে, সেই জনসমাগমে।

সত্তরোর্ধ্ব মানিকজান বেগম কখনও পিঠা, কখনও ভাত-তরকারির দোকানদারি করেন। ক্রেতার বেশিরভাগ তার মতোই ছিন্নমূল মানুষেরা। বাংলানিউজকে তিনি  বলেন, রোজা শুরুর পর ভাতের ক্রেতা কম। আমিও নিয়মিত রোজা রাখছি।  

তিনি জানান, থাকেন শাহজাহানপুর বস্তিতে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটিয়ে সেখানেই ইফতার সারেন। যেদিন যা মেলে তা দিয়ে সারতে হয় সেহরি আর ইফতার।

রাজধানীর আব্দুল্লাপুর, উত্তরা, বাড্ডা, মহাখালী, গাবতলী, শ্যামলী, মিরপুর, ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, মুগদা, বঙ্গবাজারসহ প্রায় সব একালাতে বিকেল হলেই রাস্তার পাশে বসে ইফতারির দোকান। এসব দোকানের খরিদ্দার হয় স্বল্প আয়ের মানুষেরা। বেশির ভাগ রিকশা চালক, দিনমজুর, গার্মেন্টসকর্মীরা ফুটপাতের এসব দোকান থেকে ইফতারি কেনেন। রিকশা চালকরা সাধারণত ইফতারি নিয়ে রিকশায় বসেই সেরে ফেলে ইফতার। অনেকে আবার গ্রুপ হয়ে রাস্তার পাশে বা কোনো স্থানে বসে ইফতার করেন। দিনভর রোজা রাখার পর ইফতারিতে সামান্য যা কিছুই হোক, তারা তাতেই শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।

রিকশা চালক আকবর মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সামর্থ্য খুবই সীমিত। এই সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে চেষ্টা করি ইফতারের। যেভাবেই হোক আল্লাহ যে ইতারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে, এতেই শুকরিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৯
এইচএমএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।