বুধবার (১৫ মে) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ এর ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এ ঘোষণা দেন শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবীন আহসান।
আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদের মুক্তি দাবি
কবি হেনরী স্বপন ও আইনজীবী ইমতিয়াজ মাহমুদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রকাশক রবীন আহসান বলেন, মুক্তি দেওয়া না হলে শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে শাহবাগে আমরা অবস্থান ধর্মঘট পালন করব।
তিনি বলেন, আমরা যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ওপেন করি হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন ধর্মের নানা ধরনের কথা বলছেন, তাদের কিন্তু গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। বাছাই করে হেনরী স্বপনদের মতো কবি-সাহিত্যিকের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তার মানে হচ্ছে আমাদের সরকার ভয় দেখাতে চান। আমরা সরকারকে বলব, ভয় পেতে পেতে আমরা রাস্তায় নামতে শিখেছি। যখন এই ভয় আপনারা ভেঙে দেবেন তখন পুলিশের বুলেট কামান এসবকে ভয় পাব না।
সংগঠনের সমন্বয়ক আকরামুল হকের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন কবি শাহেদ কায়েস, চলচ্চিত্র পরিচালক আবু সাঈদ, নাট্যকার অনন্ত হীরা, কবি সরদার ফারুক, প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর গৌতম, আইনজীবী হাসান তারেক চৌধুরী সোহেল, ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আবদুল বাতেন, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল, লেখক শওকত হোসেন, বাকি বিল্লাহ, এফএম শাহীন প্রমুখ।
অধ্যাপক আবদুল বাতেন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি নষ্ট আইন। ক্ষমতায় না থাকলে আপনারাও বিপদে পড়বেন। সরকারকে বুঝতে হবে কোথাও না কোথাও থামতে হবে।
হাসান তারেক চৌধুরী সোহেল বলেন, এটি একটি কালো আইন। ইতিমধ্যে প্রমাণ হয়েছে, আইনটির মাধ্যমে সরকার প্রতিবাদের ভাষা স্তব্ধ করে দিতে চায়। এভাবে চলতে পারে না।
দীপঙ্কর গৌতম বলেন, ব্যাংক ডাকাত, খাদ্যে ভেজালকারীদের গ্রেপ্তার করা হয় না। গ্রেপ্তার করা হয় নিরীহ কবিকে, যিনি দেশপ্রেম জনমুক্তির কথা লিখে। অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
কবি সরদার ফারুক বলেন, মুক্ত চিন্তার মানুষদের এভাবে গ্রেপ্তার করা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ভয়ের রাজত্ব তৈরি করা হয় যাতে শিল্পী সাহিত্যিকরা নিরব থাকে।
অনন্ত হীরা বলেন, একজন কবিকে অপমান শিল্পী সমাজ কোনভাবেই মেনে নেবে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি না দিলে বরিশালের শিল্পী সমাজকে বলব চার্চ অভিমুখে কর্মসূচি দেওযার জন্য। পাশাপাশি ঢাকাসহ সমস্ত চার্চ ঘেরাও করা হবে। এমনভাবে মুক্ত করতে হবে যেন কোনো কবিকে গ্রেপ্তার করার আগে পুলিশ প্রশাসনকে ভাবতে হয়।
আবু সাঈদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে সম্পাদক পরিষদসহ যখন সবাই প্রতিবাদ করেছিলো তখন বলা হয় আইনটি পুনর্বিবেচনা করা হবে। কিন্তু করা হয়নি। আমরা স্বাধীন দেশে বাস করি, আমাদের বাকস্বাধীনতা থাকতে হবে।
কবি শাহেদ কায়েস বলেন, তিনি (হেনরী স্বপন) অন্যায় করেননি। যারা তাকে হুমকি দিয়েছে তাদের বিচার করতে হবে।
এফএম শাহীন বলেন, এটি একটি মানবিক স্ট্যাটাস ছিল। কোন ধর্মে আঘাত করা হয়েছে সেটি পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি ধর্মীয় অনভূতি কাকে বলে সেটিও ব্যাখ্যা করতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কবি হেনরী স্বপনকে মঙ্গলবার বরিশালের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখ শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ হামলা পর বরিশাল ক্যাথলিক ডাইওসিসের বিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদারকে নিয়ে ‘রোম যখন পুড়ছে বিশপ সুব্রত তখন বাঁশি বাজাচ্ছে’ এই শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দেন।
এর পরেই নিজ ধর্মীয় (খ্রিস্টান) সম্প্রদায়ের লোকেরা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ এনে কবি হেনরী স্বপনকে হুমকি দিতে থাকেন। যার ফলশ্রুতিতে সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। সেই মামলায় গ্রেফতার হন কবি হেনরী স্বপন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৯/আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা
এসকেবি/এমজেএফ