বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে মঙ্গলবার (১৪ মে) বিদ্যালয়ে পরিচালনা পরিষদের জরুরি সভা ডেকে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন নুরুল ইসলাম।
জানা যায়, মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের কচুয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবনের অনুমোদন দেয়।
বিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, ১৯৯৭ সালে এ ভবনটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। যা মাত্র ২১ বছরেরই নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে নিলামে দেওয়া হয় যে ভবন সেটিসহ বিদ্যালয়ের আরেকটি ভবন ভেঙে তা আত্মসাৎ করেছেন নুরুল ইসলাম। এছাড়া নিলামকরা ভবনের আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক পাখা, জানালা, দরজা, বেঞ্চসহ সবকিছুই অবৈধভাবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের না জানিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন ওই সভাপতি।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে জরুরি সভা ডাকা হয়। সেখানে বিষয়টি অন্যান্য সদস্যদের কাছে জানান সভাপতি নুরুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি জিয়াউল হক জানান, বিদ্যালয়ের ভবন নিলাম হওয়ার ব্যাপারে আমরা কমিটির অন্য সদস্যরা কেউ কিছু জানি না। শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চায়েনা খাতুন এ কাজ করেছেন। আর বিদ্যালয়ের একটি ভবন নিলামে ভাঙার কথা থাকলেও সভাপতি দু’টি ভবন ভেঙেছেন। এটা মূলত তার ব্যক্তিগত স্বার্থে এবং অবৈধ দোকান বাঁচানোর জন্য।
তিনি আরও জানান, ভবনটিতে আসবাবপত্রসহ ৮টি বৈদ্যুতিক ফ্যান ছিলো যা বর্তমানে সভাপতির ভাইয়ের পোল্ট্রি ফার্মে কাজে লাগিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কচুয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক চায়েনা খাতুন জানান, বিদ্যালয় এখন ছুটি রয়েছে। আমি কিছু জানি না। বিষয়টি সভাপতি এবং শিক্ষা অফিসার জানেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, আমি নিলামে ভবন নিতে চাইনি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার সিরাজুল ইসলাম জোর করে আমাকে এ কাজ দিয়েছেন। আমি অতিরিক্ত যে ভবন ভেঙেছি সেটা নিলামে নেই। তবে শিক্ষা অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেছেন নিলামে অর্ন্তভূক্ত করে দেবেন।
তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ের সীমানায় ৫টি দোকান রয়েছে। যেগুলো স্থানীয়রা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। আমরা আজকে ম্যানেজিং কমিটির সভায় সেগুলো ভাঙার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর ভেঙে ফেলা ভবনের ফ্যানসহ আসবাবপত্র আমি ফেরত দিয়ে দেবো।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় যে ৫টি দোকান রয়েছে সেগুলো বিদ্যালয়ের সভাপতি নুরুল ইসলামের ছত্রছায়ায় চলে। নিয়মিত সেখান থেকে টাকা নিয়ে থাকেন।
মিরপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সেলিনা হক বাংলানিউজকে জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে তদন্ত করে এসেছি। মূলত বিদ্যালয়ের সীমানায় থাকা অবৈধ দোকান ঘর বাঁচানোর জন্যই সভাপতি অন্য ভবনটি ভেঙেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এদিকে সদ্য বিদায়ী মিরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম যিনি বর্তমানে যশোর সদর উপজেলায় কর্মরত। একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সদ্য যোগদানকরা মিরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম জামাল আহম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, আমি বিষয়টি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।
কুষ্টিয়া জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল হাবিব বাংলানিউজকে জানান, নিলামের বাইরে কোনো ভবন ভাঙলে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৯
এসএইচ