ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রেস্তোরাঁর শার্টার ভেঙে ক্রেতাদের বের করলো মোবাইল কোর্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
রেস্তোরাঁর শার্টার ভেঙে ক্রেতাদের বের করলো মোবাইল কোর্ট ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান দেখে বাইরে শাটার টেনে তালা ঝুলিয়ে দেয় প্রিন্স রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রমজানে ভেজালবিরোধী নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আর এ খবর পেয়ে শাটার নামিয়ে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন ইন্দিরা রোডের প্রিন্স রেস্তোরাঁর মালিক।

দুইটি হোটেলে অভিযান শেষে প্রিন্স রেস্তোরাঁর সামনে এসে তালাবদ্ধ দেখে খটকা লাগে অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের। আগ্রহ থেকেই ম্যাজিস্ট্রেট শাটারের ফাঁক গলে ভেতরে দেখার চেষ্টা করলেন।

 

রেস্তোরাঁর ভেতরে মানুষ আছে বুঝতে পেরেই বাইরে থেকে শাটার খোলার অনুরোধ জানান। কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে তালা ভাঙার নির্দেশ দিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। এরপর তালা ভেঙে শাটার খুলে চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা সবার!

ভ্রাম্যমাণ আদালতের চোখ ফাঁকি দিতে অন্তত ৫০ জন ক্রেতাকে ভেতরে রেখেই বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।

রোববার (১২ মে) দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও ক্রাইম বিভাগের সমন্বয়ে অভিযান চালানোর সময় এ ঘটনা ঘটে।

রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ শাটার বন্ধ করে দিলেও কাস্টমারদের নিশ্চুপ থাকার কারণ কি ছিলো? বাইরে থেকে ডাকাডাকি করলেও তারা কেন সাড়া দেননি? এ ক্ষেত্রেও চালাকির আশ্রয় নিয়েছিলো রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, হঠাৎ করেই হোটেলের কর্মীরা শাটার নামিয়ে দিলো। কারণ জিজ্ঞাসা করলে, তারা জানায় বাইরে মারা-মারি হচ্ছে। এ কারণে আমরা ভয়ে চুপ ছিলাম।

এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট রেস্তোরাঁর ম্যানেজারের খোঁজ করলে তিনি সেখানে নাই বলে জানান ক্যাশিয়ার সুমন। শাটার বন্ধ করে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সুমন জানান, রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে ৫টার আগে হোটেল খুলি না আমরা।  

তাহলে ভেতরে এতো কাস্টমার এলো কি করে, সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে একপর্যায়ে শাটার বন্ধ করতে সুমন নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন।

এরপর সব ক্রেতাদের বাইরে বের করে দিয়ে নিয়মিত অভিযান শুরু করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় রেস্তোরাঁর ফ্রিজে বাসি-পচা খাবার সংরক্ষণসহ কাঁচা মাছ-মাংস ও রান্না খাবার একইসঙ্গে সংরক্ষণ করতে দেখা যায়। এছাড়া রান্না ঘরে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশও দেখা গেছে।

সবশেষে রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনার লাইসেন্স দেখতে চাইলে কর্তৃপক্ষ তা দেখাতে ব্যর্থ হয়। কাজে অসহযোগিতাসহ এসব অপরাধে ক্যাশিয়ার সুমনকে আটক করে দেড় লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

এর আগে শুরুতে ফার্মগেট এলাকার কস্তুরি ও নিউ স্টার রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হয়। এ সময় পচা-বাসি খাবার সংরক্ষণ ও স্বাস্থ্য সম্মত তেল-লবণ ব্যবহার না করার দায়ে কস্তুরি হোটেলকে ৫০ হাজার টাকা ও নিউ স্টারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভেজালবিরোধী নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে ফার্মগেট এলাকায় আমাদের অভিযান চলছিলো। এ খবর পেয়ে প্রিন্স রেস্তোরাঁ শাটারে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, তারা অনেক মানুষকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো।

‘আজ মোট তিনটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। এসব অপরাধে তিনটি হোটেলকে মোট ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ’

ডিএমপির এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
পিএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।