শনিবার (১১ মে) রাতে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউসপাড়ার পাহাড়ের উপরে ছেনুয়ারা বেগমের বসতঘরে তার তালাকপ্রাপ্ত স্বামী মো. মোনাফ আগুন ধরিয়ে দিলে এ হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে।
নিহত শিশু সাদিয়া স্থানীয় একটি নূরানী মাদ্রাসার ছাত্রী আর তার সৎ বাবা আতিক একজন টমটমের (ইজিবাইক) চালক।
জানা গেছে, প্রায় সাতবছর আগে নিহত সাদিয়ার মা ছেনুয়ারার সঙ্গে আব্দুল মোনাফের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। তখন ছেনুয়ারা তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা। এর ছয়মাস পরেই সাদিয়ার জন্ম হয়। পরে ছেনুয়ারা টমটমচালক আতিককে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ে মেতে নিতে পারিনি তার আগের স্বামী মোনাফ। এরপরে অনেকবার ছেনুয়ারাকে হত্যা হুমকি দেন মোনাফ। এমনকি একদিন মোনাফ ছেনুয়ারার ভাইপো মঞ্জুর আলমকে ছুরিকাঘাতও করেন। সেই মামলায় দীর্ঘদিন জেলে থাকার পরে মাসখানেক আগে জেল থেকে বের হন মোনাফ।
নিহত সাদিয়ার মা ছেনুয়ারা বাংলানিউজকে জানান, ডিভোর্সের জের ধরে মোনাফ বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি-ধমকী দিয়ে আসছিলেন। শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঘরে রান্না করছিলাম। পাশের রুমে সাদিয়া এবং আতিক ঘুমাচ্ছেন। এসময় বাইরে দরজার কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পাই। দরজা খোলার চেষ্টা করলে দেখি বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ধারালো দা দিয়ে ঘরের বেড়া কাটা হচ্ছে। আমি দ্রুত পেছনের দরজা দিয়ে বের হতে হতে দেখি মোনাফ বাইরে থেকে পুরো ঘরে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। বেশি কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুরো ঘর আগুনে ধাউ ধাউ করে জ্বলছে। এরমধ্যে মোনাফ আগুন দিয়ে পালিয়ে গেছেন।
ছেনুয়ারার জামাতা সেলিম বসবাস করেন পাশের ঘরে।
সেলিম বাংলানিউজকে জানান, এ অগ্নিকাণ্ডে তার এবং আরেক ভায়রা মো. বশিরের ঘরও পুড়ে গেছে। এতে তাদের প্রায় তিন লাখ টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সেলিম আরও জানান, ডিভোর্সের পর থেকে তার শাশুড়ির সঙ্গে মোনাফের সমস্যা চলছে। প্রায় সময় মোনাফ এসে তাকে জ্বালাতন করতেন।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস বাংলানিউজকে জানান, খাড়াপাড়ারে উপর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়। এ সময় তাদের এক কর্মী আহতও হন। তবে তাদের চেষ্টায় দ্রুত আগুন নেভানো সম্ভব হলেও ওই ঘরের ভেতরেই আগুনে দগ্ধ হয়ে শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়।
তিনি আরও জানান, ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে,পারিবারিক কোন্দলের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে ছেনুয়ার আগের স্বামী মোনাফ আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি আরও তদন্ত করা হবে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ওসি আরও জানান, মরদেহগুলো ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
এসবি/এএটি