ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইফতারসামগ্রী ভাজা হচ্ছে পোড়া মবিলে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৯
ইফতারসামগ্রী ভাজা হচ্ছে পোড়া মবিলে মানববন্ধনে ১৫টি সমমনা সংগঠনের নেতারা, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রেল ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোটরযান, নৌযান ও কলকারখানায় পোড়া মবিল মিশ্রিত সয়াবিন তেল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ইফতারসামগ্রী ভাজা হচ্ছে। সেইসঙ্গে ভাজায় একই তেল বারবার ব্যবহার করার ফলে, সেটা বিষাক্ত হয়ে যায় বলে দাবি করেছেন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের (নাসফ) সভাপতি ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ময়না।

শুক্রবার (১০ মে) পুরান ঢাকার চকবাজার জামে মসজিদের সামনে ‘মোবাইল কোর্টই যথেষ্ট নয়, ইফতারসহ খাদ্যে ভেজাল ও বিষাক্তকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে’- পবা, নাসফ, পল্লিমা গ্রিনসহ ১৫টি সমমনা সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে অয়োজিত মানববন্ধনের বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন।

হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে এই মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, পল্লিমা গ্রিনের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, পল্লিমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক আউয়াল কামরুজ্জামান ফরিদ, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম প্রমুখ।

এসময় বক্তারা বলেন, রমজানে ইফতারিতে যেসব খাদ্যের সবচেয়ে বেশি চাহিদা, সেগুলো হলো শরবত, খেজুর, ছোলা, মুড়ি, বেসন, ডাল, তেল, চিনি, দুধ, সেমাই, মোরগ, মাছ, দেশি-বিদেশি ফল, শসা, টমেটো, বেগুন, কাঁচামরিচ, লেবু, আটা, ময়দা ইত্যাদি। তাই রমজানের বাজার ধরার লক্ষ্যে এসব পণ্য উৎপাদন ও মজুত করতে বিষাক্ত কেমিক্যাল, কৃত্রিম গ্রোথ হরমোন, ফরমালিন ও মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইফতারিতে যেসব খাদ্যপণ্যে বেশি চাহিদা, রমজান এলে সেগুলোর উৎপাদন, আমদানি, মজুতকরণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। কেননা, অসাধু শিল্পপতি, উৎপাদনকারী, কৃষক, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, মজুতদার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা অধিক লাভের লোভে এসব খাদপণ্যে ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক ও ভেজাল মিশিয়ে থাকেন।
 
বক্তারা দাবি করেন, রাসায়নিক রঙ ও বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে ভোজ্য তেল তৈরি করা হয়। এছাড়া সেমাইয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এ উপাদানটি উৎপাদন এবং তাতে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হচ্ছে। যা আমাদের ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং আগামী প্রজন্ম বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বড় হচ্ছে। তাই জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইফতারসহ সব খাদ্য বিষ ও ভেজালমুক্ত করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সবার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি বলে জানান বক্তারা।

শিশুখাদ্যসহ ফলমূল, শাকসবজি, মাছ-মাংস, দুধ, মিষ্টি, প্যাকেটজাত খাদ্য ও পানীয়সহ প্রায় সব ধরনের খাবারে উৎপাদন পর্যায় থেকে বাজারজাতকরণ ও খাদ্যগ্রহণ পর্যন্ত স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারা।

তাই মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আইনগুলোর কঠোর প্রয়োগ, দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি, বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে বলে দাবি তাদের।

বক্তারা আরও বলেন, জনগণকে ভেজাল ও বিষমুক্ত খাদ্য সরবরাহের লক্ষ্যে সরকার নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার করেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হতে পারছে না। তাই মোবাইল কোর্টই এ সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট নয়। কেননা, বিষাক্ত খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, এমনকি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা নীরব গণহত্যার সামিল।

বক্তারা এও বলেন, ফল ও শাকসবজির দ্রুত বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম গ্রোথ হরমোন, কীটপতঙ্গ প্রতিরোধে নিষিদ্ধ অতিরিক্ত কীটনাশক এবং এসব পণ্য তাজা ও সতেজ রাখতে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। ফল কৃত্রিম উপায়ে পাকাতে ব্যাপকভাবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, কপার সালফেট, কার্বনের ধোঁয়া, পটাশের লিকুইড সলিউশন প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া মাছে ফরমালিন আর মুড়িতে ইউরিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত বোতল ও প্যাকেটজাত খাদ্য, যেমন শরবত, ফলের রস, জ্যাম-জেলিতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রঙ ও কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। মিষ্টিতে দেওয়া হয় কৃত্রিম মিষ্টিদায়ক, আলকাতরা এবং কাপড়ের রঙ।

চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, এসব ভেজালের প্রভাবে গলায় ক্যান্সার, রক্ত ক্যান্সার, হাঁপানি এবং চর্মরোগ হয়। ফরমালিনযুক্ত খাবারে পাকস্থলীতে প্রদাহ, লিভারের ক্ষতি ও অস্থিমজ্জা জমে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৯
এমআইএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।