যদিও বিষয়টিকে সম্পূর্ণ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে রীতিমত মাইকিং করে গুজবে কান না দেওয়ার আহবান জানানো হচ্ছে।
পুলিশের দাবি, এরা রোহিঙ্গা নয়, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তায় ধারণা করা যায় এরা মানসিক ভারসাম্যহীন।
জানা গেছে, সন্ধ্যা নামতেই খবর ছড়িয়ে পড়ছে, ওই পাড়ায় ছেলে ধরা রোহিঙ্গা ঢুকেছে। এক কান দু’কান করে এ খবর গ্রামময় ছড়িয়ে পড়তেই নীরিহ গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে রাত জেগে পাহারা বসাচ্ছে, রোহিঙ্গা ধরার চেষ্টা করছে।
এমন ঘটনা জেলার তালা, সাতক্ষীরা, দেবহাটা, শ্যামনগর ও কলারোয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ঘটেছে।
গ্রামবাসীরা বলছেন, এই রোহিঙ্গারা নিজেদের চেহারা লুকাতে ছদ্মবেশ ধারণ করে দলবদ্ধভাবে গ্রামে গ্রামে ঢুকছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় তাদের চলাফেরা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা আতঙ্ক এতোদূর পৌঁছেছে যে, অভিভাবকরা তাদের শিশু সন্তানদের শিক্ষকের কাছে অথবা একাকি স্কুলে যেতে দিচ্ছেন না। পারলে সঙ্গে নিজেরা যাচ্ছেন, অথবা দলবদ্ধ হয়ে পাঠানোর চেষ্টা করছেন।
দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) উজ্জ্বল কুমার মৈত্র জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পারুলিয়া ইউনিয়নের কদবেলতলা এলাকা থেকে এক রোহিঙ্গা নারীকে গ্রামবাসী আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। ওই নারী কয়েকদিন ধরে সেখানে ঘোরাফেরা করছিলেন। পুলিশ তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
তবে, গ্রামবাসীর অভিযোগ, তিনি তার সঙ্গীদের নিয়ে ছেলে ধরার চেষ্টা করছিলেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার বাশদহা এলাকা থেকে জিতেন নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দেয় এলাকাবাসী।
গ্রামবাসীর দাবি, রোহিঙ্গা সদস্য জিতেন ভবানীপুর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে, তালা ও পাটকেলঘাটা থানা এলাকা থেকে আরও তিন ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে গ্রামবাসী। তাদের নাম পরিচয় জানা না গেলেও পুলিশ বলছে, তারা অপ্রকৃতিস্থ।
এদিকে, নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার থেকে বেশ কিছু সংখ্যক নারী ও পুরুষ রোহিঙ্গা সদস্য সেখানকার আশ্রয় শিবির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মানব পাচারকারী দালালদের মাধ্যমে তারা ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এই লক্ষ্যে বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা সদস্যকে সাতক্ষীরা সীমান্তে আনার পর দালালরা তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। পরে এসব রোহিঙ্গা খাদ্যের সন্ধানে গ্রামের দিকে ঢুকে পড়েছে। এদেরই কারণে জেলাব্যাপী ছেলে ধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি রোহিঙ্গা নাম শুনলেই গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান জানান, ছেলে ধরা রোহিঙ্গা বিষয়ে যা প্রচার হচ্ছে তার সবই গুজব। কলারোয়ায় যে দুই নারী ধরা পড়েছেন তারা মূলত ভিখারী। সেখানকার একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে তারা ভিক্ষা করেন। গ্রামবাসী তাদের ছেলে ধরা রোহিঙ্গা মনে করে আটক করে। প্রকৃতপক্ষে এই কয়দিনে সন্দেহভাজন যে কয়জনের সন্ধান মিলেছে তারা কেউই রোহিঙ্গা নন। এমনকি তারা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত এমন প্রমাণও মেলেনি। তিনি গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৯
আরএ