ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভাঙছে ইছামতির পাড়, ভূ-খণ্ড হারাচ্ছে বাংলাদেশ

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৯ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৯
ভাঙছে ইছামতির পাড়, ভূ-খণ্ড হারাচ্ছে বাংলাদেশ

সাতক্ষীরা: আন্তঃসীমান্ত নদী ইছামতির বাংলাদেশ পাড়ে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ক্রমান্বয়ে ভূমি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পাড়ের দেবহাটা উপজেলার ছয়টি মৌজার অন্তত ২১০ একর ভূমি নদীগর্ভে চলে গেছে। একই সঙ্গে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ইছামতি পাড়ের লাখো মানুষ। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে দিন কাটছে তাদের।

দেবহাটা উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেবহাটার ভাতশালা সীমান্তের ৫৫ একর, টাউন শ্রীপুর মৌজার ২৬১৩ ও ৯৯৫ দাগের ৯৬.৬৩ একর, সুশিলগাতী মৌজার ১১৫০ দাগের ২২.৪১ একর, শিবনগর মৌজার ৭০৭ ও ৭৩৮ দাগের ২৫.২১ একর, দেবহাটা মৌজার ৫৫০৫ দাগের ৯.৪৪ একর, বসন্তপুর মৌজার ১ ও ২ দাগের ১.৩৭ একর জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।  

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইছামতির ওপারে ভাঙন ঠেকাতে ভারত সরকার নদীর পাড়ে ইটভাটা স্থাপন, আরসিসি ব্লক স্থাপনসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বাংলাদেশের এপারে ভাঙছেই।

আর এতে ভূ-খণ্ড হারাচ্ছে বাংলাদেশ।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দেবহাটা উপজেলার নাংলা হতে নওয়াপাড়া স্লুইস গেট পর্যন্ত ইছামতি নদীর বেড়িবাধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেছে। দুর্বল ও জরাজীর্ণ এই বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে বসেছে। কোথাও কোথাও ভাঙতে ভাঙতে মাত্র এক দেড় ফুট অবশিষ্ট রয়েছে।  

আর এ ভাঙন আরও তীব্রতর করে তুলেছে সম্প্রতি বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ফণী।  ইছামতির বাংলাদেশ পাড়ের ভাঙন।  ছবি: বাংলানিউজ 

এতে যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে দেবহাটা উপজেলার ইছামতি সীমান্ত সংলগ্ন খানজিয়া, নাংলা, নওয়াপাড়া, ছুটিপুর, গাংআটি, হাদিপুর, বসন্তপুর, খানজিয়া, শুলপুর, নলতা, শেহারা, দুরদুরে, মাঘুরালীসহ ১০-১৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

আর তা হলে শত শত মৎস্যঘের, হাজার হাজার বিঘা জমির ফসলের আবাদ ভেসে যাওয়াসহ জনজীবনে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  

জানা যায়, দেবহাটা থানা ভবন থেকে কয়েকগজ দূরে সুশীলগাঁতী এলাকায় ২০০৯ সালে বেড়িবাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এরপর ২০১৩ সালে আবারো ভাঙন দেখা দেয় একই স্থানে। পরে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ভাঙন দেখা দেয় নাংলা বাজার, দেবহাটা পাঠবাড়ি ও সুশীলগাঁতী-টাউনশ্রীপুরের বেশ কিছু পয়েন্টে। সে সময় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ অনেকেই পরিদর্শন করেন ভাঙনকবলিত এলাকা। তারপরও অদ্যাবধি ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধ স্থায়ীভাবে সংষ্কারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।  

আর প্রতিবছর ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্রের একটি অংশ।  

সীমান্ত পাড়ের বাসিন্দা সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বেড়িবাঁধ ভাঙনে আমাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী এই বেড়িবাঁধ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাতে নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।  

স্থানীয় নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদীর পাড়ে পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় ভাঙছে ইছামতির পাড়। আমাদের দাবি আরসিসি ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ রক্ষা করা হোক।  

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর সেকশন অফিসার ওবায়দুল হক মল্লিক বাংলানিউজকে জানান, ইছামতির ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধ সংস্কারে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad