শনিবার (০৪ মে) সকাল ৬টা থেকে টানা ১০টা পর্যন্ত ফণীর প্রভাবে বৃষ্টি ও প্রচণ্ড গতিবেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায় এ অঞ্চলের উপর দিয়ে। এসময় ওই উপজেলায় প্রায় অর্ধ-শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সোমবার (০৬ মে) সোনাগাজীর চরচান্দিয়া জেলেপাড়া, দক্ষিণ চরচান্দিয়া ধান গবেষণা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসত ঘর হারিয়ে অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে দিন যাপন করছেন।
তাদের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড়ের দিন বা পরবর্তী দিনে মেম্বার চেয়ারম্যান বা প্রশাসনের লোকজন কোনো খোঁজখবর নেয়নি। ঝড়ের দিন জোর করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গেলেও তাদের কোনো ধরনের খাবার দেওয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য বলছে, এ ঝড়ে পুরো জেলায় ৭টি বসতঘর পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৬৭টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আংশিক। এর মধ্যে বেশির শতাংশই সোনাগাজী উপজেলার চর চান্দিয়া এলাকার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, ঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০৪ একর জমির ফসল।
এদিকে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম (কারিগরি) আবদুল জলিল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় ছয়টি উপজেলায় ১৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ৫০-৬০টি স্থানে তার ছিঁড়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।
উপজেলার ৬নং চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ৬০ বছর বয়সি মৃত শেখ ফরিদের স্ত্রী রুচিয়া খাতুন। ঘূর্ণিঝড় ফণির আঘাতে নিঃস্ব হয়েছে তার সংসার।
রুচিয়া খাতুন বলেন, হঠাৎ শো শো শব্দে প্রচণ্ড ঝড়ো হওয়া এসে আমার বসতঘরটি লণ্ডভণ্ড করে দেয়। ঘরের নিচে চাপা পড়ে নষ্ট হয় আসবাবপত্র।
তিনি বলেন, নিজের কোনো জমিজমা না থাকায় সরকারি জমি বন্দোবস্ত করে একটি ঘর করেছিলেন। কিন্তু আজ তার সেই সাজানো সংসার শেষ হয়ে গেলো। একমাত্র ছেলে নদীতে মাছ শিকার করে চলে তাদের পরিবার। তাকে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
চরচান্দিয়া ইউনিয়নের চরখন্দকার জেলেপাড়ার বাসিন্ধা মনোরঞ্জন জল দাসের ছেলে হর মোহন জলদাশের বসবাস নদীপাড়ে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঘর-বাড়ি হারিয়ে নির্বাক তিনি।
হর মোহন বলেন, দুইমেয়ে আর দুইছেলে নিয়ে সুখের সংসার ছিল আমার। কিন্তু এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও নেই। জলে ভেসে গেছে জাল, মাছ ধরবো কীভাবে, খাবো কি? থাকবো কোথায়?
এসব অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, সেখানে আবু সুফিয়ান, বেলাল হোসেন, মো. মোস্তফা, লাইলী আক্তার, বেবি আক্তার, রিয়াজউল হক, জান্নাতুর লাহের, আনিছুল হকসহ আরও বেশ কয়েকজনের ঘর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশের বসতঘর ভেঙে গেছে, বাতাসে উড়ে গেছে আসবাবপত্র।
এ ব্যাপারে স্থানীয় চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে তালিকা করে তা উপজেলা প্রশাসনের কাছে দিয়েছি।
উপজেলা ও জেলা প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন দ্রুতই ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ পাবেন।
জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ফসলি জমি, কাঁচা ঘর বাড়ি। অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। দ্রুতই তাদের সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১০ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৯
এসএইচডি/এএটি