এমনই আর্তনাত করে মাটিতে লুটিয়ে হাউ মাউ করে কাঁদছেন আর মূর্ছা যাচ্ছেন পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামের জেলে ইব্রাহীম।
শুক্রবার (৩ মে) উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায় ইব্রাহিমের সংসার-ভবিষ্যৎ।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে ঘরচাপা পড়ে মারা যায় ইব্রাহিমের ৪ বছরের ছেলে মো. রবিউল ইসলাম। চোখের সামনে নিজের সন্তানের মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তার স্ত্রী জেসমিন। পরে সংসারের অভাব-অনটনের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে জেসমিন। সিডরের বছর দুই পর জেসমিনের কোলে জন্ম নেয় জাহিদুল। এরপর অভাবের সংসারের দৈনন্দিন যাতনা আর বৌ-শাশুড়ির কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বছর তিনেক আগে বিষপান করে আত্মহত্যা করেন স্ত্রী জেসমিন।
ছোট ছেলে জাহিদুল আর মেয়ে জান্নাতিকে নিয়ে একরকম চলছিল ইব্রাহীমের সংসার। এরই মধ্যে রোগে ভুগে মারা যায় বাবা আব্দুল বারেক। একের পর এক ইব্রাহিমের জীবনে নেমে আসে বিপদের পর বিপদ। সিডরে ৪ বছরের ছেলে রবিউলকে নিয়েই শেষ হয়নি, ফণীও ইব্রাহিমের মা নুরজাহান এবং ছোট ছেলে জাহিদুলকে নিয়ে গেল।
শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ঘরচাপা পড়ে মৃত্যু হয় মা নূরজাহান বেগম ও ছোট ছেলে জাহিদুলের।
ইব্রাহিম কাঁদছেন আর বলছেন- ‘মোর বড় পোলাডারে সিডরে মাইরা গ্যাছে, কষ্টের ঠেলায় বউ আত্মহত্যা করছে, চিন্তায় হার্টফেল কইরা বাবা মারা গ্যাছে, এহন ফণীতে লইয়া গ্যাছে মোর ছোড পোলা আর মা’রে। ’ সরেজমিন দেখা যায়, ইব্রাহিমের কান্না আর আহাজারি। নুরজাহান এবং জাহিদুলের মৃত্যুতে শুধু দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামই নয় গোটা পাথরঘাটা স্তব্দ হয়ে পড়েছে। আত্মীয় স্বজনদের পাশাপাশি প্রতিবেশীরাও আসছেন ইব্রাহিমকে সান্ত্বনা দিতে। একই পরিবারে পর পর ৪ জনের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. শাহিন জানান, স্ত্রী জেসমিনের আত্মহত্যার দুই বছর পরে বিয়ে করেন ইব্রাহীম। তার ছোট ছেলে জাহিদুল থাকতো মঠবাড়িয়ায় তার বড় বোন রাহিলার বাড়িতে। গত শুক্রবার সকালে বড়বোন রাহিলা তার ছোট ছেলে জাহিদুলকে বেড়াতে নিয়ে আসেন।
জাহিদুলকে বাড়িতে রেখে ছোট মেয়ে জান্নাতিকে নিয়ে মঠবাড়িয়ায় ফিরে যান তিনি। সন্ধ্যার দিকে সবাই মিলে একবার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাইলে বৃদ্ধা মা নূরজাহান যেতে রাজি না হওয়ায় সবাই থেকে যান বাড়িতেই। রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঝড়ের তাণ্ডবে তাদের ঘর ভেঙে পড়লে তার নিচে চাপা পড়ে মারা যান বৃদ্ধা মা নূরজাহান আর ছেলে জাহিদুল।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর দায়িত্বরত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইব্রাহীমকে ৪০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৯
আরএ