ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘ফণী’র প্রভাবে ঢাকায় অতিভারী বৃষ্টির শঙ্কা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৫ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৯
‘ফণী’র প্রভাবে ঢাকায় অতিভারী বৃষ্টির শঙ্কা বৃষ্টি মাথায় পথ চলছেন এক বাইসাইকেল চালক/ছবি- শাকিল

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে ৪ ও ৫ মে (শনি ও রোববার) রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৮টি অঞ্চলে অতিভারী বর্ষণের শঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ঢাকায় অল্প বৃষ্টিতেই এখন বেশিরভাগ এলাকায় জলজটে হাঁটু পর্যন্ত ডুবে যায়। এ অবস্থায় ফণীর প্রভাবে অতিভারী বৃষ্টির শ‌ঙ্কা কপালে ভাঁজ ফেলছে রাজধানীবাসীর।

অতিভারী বৃষ্টিপাতের এলাকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক অবস্থানে রয়েছে বৃহত্তর হাওর অঞ্চল। কেননা, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে উপরেই আসাম, মেঘালয় হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে আবহাওয়াবিদরা আকস্মিক বন্যার শঙ্কা দেখছেন।

ফলে ধানের দেশে ফসল নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও ভাবিয়ে তুলছে কৃষকদের।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, ৫ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও বজ্রসহ ভারী থেকে কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ৮৯ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হলে তাকে অতিভারী বৃষ্টিপাত বলা হয়েছে।

এই অতিভারী বৃষ্টিপাত টানা কয়েকদিন ধরে চললে সমতলের শহরগুলোতে জলজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আর পাহাড়ের শহরগুলোতে ঘটে ভূমিধসের মাধ্যমে হতাহতের ঘটনা।

অতিভারী বৃষ্টিপাত এবং আকস্মিক বন্যার বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলের কয়েকটি স্থানে ৫ মে নাগাদ ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ফণীর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হবে। তবে সাব-হিমালয়ান এলাকা ও সিকিমে ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এছাড়া অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিরোজরাম, মনিপুর, ত্রিপুরায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হলেও ৪ এবং ৫ মে আসাম, মেঘালয়ের কিছু কিছু জায়গায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া আরও জানিয়েছেন, আসাম, মেঘালয়ে অতিভারী বৃষ্টিপাত এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের অতিভারী বৃষ্টিপাত হলে এসব অঞ্চলের প্রধান নদীগুলো বিশেষত সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, যাদুকাটা ও তিস্তা নদীর পানির সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে কোনো কোনো নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম হয়ে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সব অঞ্চলেই বৃষ্টিপাত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি রাজারহাটে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছ আবহাওয়া অধিদফতর। ভারতের সিকিম, আসাম, মেঘালয়েও বৃষ্টিপাত বাড়ছে।

ফণীর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের শঙ্কার বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আরফিন হক বলেন, এমনিতেই প্রতিদিন মতিঝিলের অফিসে যেতে-আসতে চারঘণ্টার মতো সময় ব্যয় হয়। আর যদি বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়, মিরপুর থেকে মতিঝিল যেতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হবে।

আরফিনের মতো রাজধানীবাসী সবার এখন একই চিন্তা। বৃষ্টি এ শহরে আর উপভোগ্য নয়। রীতিমতো ভয়ের নাম বলেই মন্তব্য করলেন আশিকুর রহমান নামের এক ছাত্র।

রাজধানীবাসীর যাপিত জীবনের এ সমস্যার চেয়েও বড় সমস্যা চাষিদের। হাওর অঞ্চল তথা কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা নিলয় রহমান বলেন, কয়েক বছর আগেই হঠাৎ বন্যার কারণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। একই সঙ্গে হাওরের মাছও মরে যায়। এবার যদি হঠাৎ বন্যার দেখা দেয়, কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, তা খুব চিন্তার বিষয়। যদিও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এরইমধ্যে সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

এর বাইরেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আমচাষিরাও রয়েছেন শঙ্কায়। সাতক্ষীরার আমচাষি পলাশ রহমান বলেন, এবার গরমের কারণে আমের রোগ বেশি হয়েছে। এখন ঝড়েও যদি নষ্ট, এ ক্ষতি পোষানো যাবে না।

ফণীর অগ্রভাগ শুক্রবার (০৩ মে) সকাল থেকে দেশের সব জায়গায় কমবেশি প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটি শুক্রবার দিনগত রাতে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানবে। যদিও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে তীব্রতা একেবারে হারিয়ে ফণী শনিবার বিকেল নাগাদ ৬০-৭০ কিলোমিটারের তীব্রতা নিয়ে আঘাত হানবে খুলনায়। এরপর ৫ মে নাগাদ গভীর নিন্মচাপ আকারে শান্ত হয়ে যাবে। তবে জানমাল রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৯
ইইউডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad
welcome-ad