সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল সোয়া চারটার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
তিনি বলেন, রাত আড়াইটা থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া আস্তানা থেকে অবিস্ফোরিত অবস্থায় ৪টি আইইডি উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো পরে আমাদের বোমা বিশেষজ্ঞ দল নিষ্ক্রিয় করে।
আস্তানায় ২ জন ছাড়া আর কেউ ছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি না এখানে আরো কেউ ছিলো। কারণ, অভিযানের শুরুতেই আমরা পুরো এলাকা কর্ডন করে ফেলি।
দুই জঙ্গির অন্য কারো সঙ্গে বা কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে কারো যোগাযোগ ছিলো কিনা তা নিশ্চিতে এর আগে আমাদেরকে তাদের (দুই জঙ্গির) পরিচয় নিশ্চিত হতে হবে।
সিআইডির ফরেনসিক টিম মরদেহের ভিসেরা ও নমুনা সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষার পর তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপর জানা যাবে তাদের সঙ্গে কারো বা কোনো গোষ্ঠীর যোগাযোগ ছিলো কিনা।
র্যাব-২ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী বাংলানিউজকে বলেন, মরদেহ দু’টি ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আপাতত জঙ্গি আস্তানার বাড়িটি কর্ডন করে রাখা হবে।
এর আগে অভিযানস্থল পরিদর্শন শেষে বেলা ১১টার দিকে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, বসিলায় ‘জঙ্গি আস্তানা’য় বিস্ফোরণে সেখানে থাকা সন্দেহভাজনদের মরদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে। আস্তানায় তিনটি পায়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সে হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে অন্তত দুইজনের মরদেহ রয়েছে।
তার আগে সকাল সোয়া ৯টার দিকে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা বাড়িটির ভেতরে ঢোকার খানিকক্ষণ পর মুফতি মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, আস্তানার ভেতরে কেউ জীবিত নেই। অবিস্ফোরিত অবস্থায় ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
খানিকক্ষণ পর মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আস্তানার ভেতরে কেউ জীবিত নেই। অবিস্ফোরিত অবস্থায় আইইডি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সেজন্য বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। অবিস্ফোরিত আইইডিগুলো নিষ্ক্রিয় করার কাজ করছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভোর সাড়ে ৩টার দিকে ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলা হয়। এরপর থেকেই বাড়িটি ঘিরে অভিযান চালাচ্ছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। শুরুতেই ওই বাসার একটি কক্ষ থেকে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এরপর ভেতর থেকে র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসার কেয়ারটেকার সোহাগ, তার স্ত্রী মৌসুমী ও বাসার কাছের একটি মসজিদের ইমাম ইউসুফকে আটক করা হয়েছে। তবে বাসায় অবস্থান নেওয়া জঙ্গিদের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
কেয়ারটেকার সোহাগ জানান, সন্দেহভাজন দুই যুবক এক/দেড় মাস আগে বাসাটি ভাড়া নেয়। তবে বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় তারা কোনো নাম-ঠিকানা জমা দেয়নি।
ওই বাসার আরেক বাসিন্দা জুনায়েদ বাংলানিউজকে জানান, বাসাটিতে চারটি রুমে চার পরিবার থাকেন, তার একটিতে পরিবারসহ ভাড়া থাকেন তিনি। বাসার কেয়ারটেকার সোহাগ ডিশের ব্যবসা করেন। তবে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই তার।
** বসিলার ‘জঙ্গি আস্তানার’ অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা
** সুজন ও সুমন নামে বাসা ভাড়া নেয় ২ জঙ্গি
** বসিলার ‘জঙ্গি আস্তানা’য় বিস্ফোরণের পর আগুন
** বাড়িটিতে অন্তত দুই জঙ্গির মরদেহ পড়ে আছে: র্যাব
** ‘ভেতরে কেউ জীবিত নেই, আইইডি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে’
** বাড়িটিতে ঢুকেছে র্যাবের বিশেষ ফোর্স, ওড়ানো হয়েছে ড্রোন
** বাড়িটিতে মাসদেড়েক ধরে থাকছে সন্দেহভাজন ২ জঙ্গি
** বসিলার বাড়িটির ভেতরে একাধিক জঙ্গি অবস্থান করছে: র্যাব
** বসিলায় জঙ্গি আস্তানায় র্যাবের অভিযান, গুলিবিনিময়
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৯
পিএম/জেডএস