ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘প্রাণনাশের শঙ্কায়’ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৯
‘প্রাণনাশের শঙ্কায়’ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: পুরান ঢাকার লালবাগের শহিদনগরের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মো. আমিন উল্লাহর স্ত্রী রেনু বেগম সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, তার সন্তানদের মারধর করে ভিটেবাড়ি জবর দখলের চেষ্টা চলছে। তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. নাজিরের এই চেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে তারা ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের হাতে রক্তাক্ত হয়েছেন। এমনকি থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে উল্টো হয়রানির শিকার হয়েছেন, মামলায় জড়িয়েছেন। এই অবস্থায় জীবননাশের শঙ্কায় ভুগছে মুক্তিযোদ্ধা আমিন উল্লাহর পরিবার। এই বিপদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন রেনু বেগম।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন করেন রেনু বেগম।

রেনু বেগমের স্বামী মুক্তিযুদ্ধের পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে অডিটর হিসেবে চাকরি করেন।

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে লালবাগ থানার ২৪ নং ওয়ার্ডের ৩০৫ শহিদনগরের বাড়িটিতে থাকছে আমিন উল্লাহর পরিবার।

আমিন উল্লাহ জীবিত থাকাবস্থায় কোনো দিন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নেননি উল্লেখ করে রেনু বেগম বলেন, তিনি সব সময় বলতেন, আমি দেশকে ভালোবেসে যুদ্ধ করেছি, সম্মানী ভাতা আমি নেবো না।

রেনু বেগম বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে বাড়ির নিচতলায় একটি দোকান তুলে আমরা ব্যবসা করে আসছি। আমার স্বামী বার্ধক্যের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ব্যবসা দেখার দায়িত্ব পড়ে বড় ছেলে হামিদ উল্লাহ জনির ওপর। গত বছরের নভেম্বরে আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় আমাদের বাড়ির দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া মো. নাজির, তার স্ত্রী ফরিদা, তাদের মেয়ে ফারহিন এবং মেয়ের জামাই আরিফ বাড়িটির জাল দলিল (নং ১৫২০) করে মালিকানা দাবি করতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, তারা আমাদের বাড়ি ও দোকান ছেড়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দিতে শুরু করে। না হলে বাড়িতে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। আমরা  দলিলের সার্টিফায়েড কপি তুলে দেখতে পাই ১৫২০ নম্বরে তাদের নামে কোনো দলিল নেই। সেটি আসলে জালিয়াতি। আমরা তখন এলাকার ওয়ার্ড কমিশনারকে বিষয়টি জানালে তিনি দেখবেন বলে জানান। এরপর জাল দলিলকারীরা তড়িঘড়ি করে জাল দলিল দিয়ে ফরিদার মেয়ের নামে আবার হেবা করে দেয়। যার নম্বর ৩২৭৫। এই জালিয়াতির মাধ্যমে তারা নামজারিও করিয়ে নেয়।  

ঘটনাটির পর আমিন উল্লাহর পরিবার আদালতে দু’টি মামলা করে (১৬৫/২০১৮, ৪১৪/২০১৮) জানিয়ে রেনু বেগম বলেন, মামলার কারণে জাল দলিলকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে নানা রকম ভয়ভীতি দেখায় এবং হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। এজন্য আমার ছেলে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি জিডি করে (২৩৫)। এর কিছুদিন পর কমিশনার আমার ছেলেকে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে আমার ছেলে উপস্থিত হলে এক পর্যায়ে লালবাগ থানার ওসি আসেন। তিনি আমার ছেলেকে দোকান ছাড়তে বললে তাতে ছেলে অসম্মতি জানায়। এতে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে মারতে মারতে কমিশনার কার্যালয় থেকে আমার ছেলেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। বিনা কারণে ও মামলা ছাড়া তিনদিন থানায় আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আমার ছেলেকে।  

রেনু বেগম আরও বলেন, ছেলেকে নির্যাতন ও পৈতৃক সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্রের কথা শুনে আমার স্বামী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। এই সুযোগে ভাড়াটিয়া নাজির, আরিফ গং আরও বেপরোয়া হয়ে আমার দুই ছেলে ও দোকানের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এরপর গত ১৬ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৩টার দিকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রধারী ২০-২৫ জন ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে আমাদের দোকানের তালা ভেঙে লুটপাট চালাতে থাকে। টের পেয়ে অন্যান্য ভাড়াটিয়াসহ আমরা বাধা দিতে গেলে এলাকার কিছু  রাজনৈতিক নেতাদের মদতে জাল দলিলকারী আরিফ, নাজির ও তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আমার ছোট ছেলে রানাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। আমরা এবং অন্য ভাড়াটিয়ারা বাধা দিতে গেলে আমার সন্তানদের ওপর ও কিছু ভাড়াটিয়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সন্ত্রাসীরা। তারা হত্যার উদ্দেশ্যে  এলোপাতাড়ি কুপিয়ে, পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আমার সন্তান ও অন্য ভাড়াটিয়াদের। আমার মেয়ের জামাকাপড় টেনে-হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলে শ্লীলতাহানি করে, মাথায় দা দিয়ে আঘাত করে। পুলিশ প্রথমে দর্শকের ভূমিকায় থাকলেও পরে সন্ত্রাসীদের না ধরে উল্টো রক্তাক্ত অবস্থায় আমার সন্তানদের ধরে নিয়ে যায়। আর সন্ত্রাসীরা পুলিশের পাহারায় দোকানে থাকা মালামালসহ কয়েকটা কার্টন রাস্তায় ফেলে তা জবরদখল করে নেয়।

রেনু বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমরা লালবাগ থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটি না নিয়ে সন্ত্রাসীদের পক্ষে আমাদের সবার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা নিয়ে নেয়। পরে কোনো উপায় না পেয়ে ঘটনার দু’দিন পর আমরা আদালতে গিয়ে মামলা দায়ের করি। মামলা নং ৫১/১৯।

সন্ত্রাসীদের ও পুলিশি হয়রানির ভয়ে পরিবারের কেউ বাসায় থাকতে পারছেন না উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রেনু বলেন, আমাদের জীবননাশের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। অথচ আমাদের ওপর হামলাকারীরা ও লুটপাটকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে সদর্পে। এই অবস্থায় একজন মুক্তিযোদ্ধার পৈতৃক ভিটা জাল দলিলকারীদের হাত থেকে রক্ষা ও তার সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং দখলদার ও হামলাকারীদের মদতদাতাদের শাস্তির আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।