ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রাঙামাটির ৬ উপজেলায় নদী পথে যোগাযোগ ব্যাহত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
রাঙামাটির ৬ উপজেলায় নদী পথে যোগাযোগ ব্যাহত কাপ্তাই হ্রদ

রাঙামাটি:  রাঙামাটির ৬টি উপজেলায় নদী পথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন ওইসব উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা। 

রাঙামাটির দুর্গম ওইসব উপজেলাগুলো মূলত গড়ে উঠেছে কাপ্তাই হ্রদকে কেন্দ্র করে। আর ওইসব উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো লঞ্চ বা বোট (ইঞ্জিন চালিত নৌকা)।

 

প্রতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে কাপ্তাই নদীর পানি শুকিয়ে গেলে ওইসব এলাকায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওই এলাকার সঙ্গে নদী পথে কয়েকমাস জেলা সদরের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে স্থানীয়দের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।

জেলা সদরের সঙ্গে যে সব উপজেলার লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে সেসব উপজেলাগুলো হলো- বাঘাইছড়ি, লংগদু, নারিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি। এই ৬ উপজেলার লঞ্চ যাত্রীরা এখন অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করছেন। তারা এখন জেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াত করছেন ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত বোট ও ভাড়ায় চালিত স্পিডবোটে করে।

নদীর তলদেশ ভরাট, অবৈধভাবে হ্রদের পাড় দখল এবং ড্রেজিং না করায় প্রতি গ্রীস্ম মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে হ্রদ এলাকা বিলে পরিণত হয়। এ বছর  পানি বেশি শুকিয়ে যাওয়ায় হ্রদ তীরবর্তী এলাকায় বাসিন্দারা চরম বিপাকে পড়েছেন।  

লংগদু উপজেলার বাসিন্দা আলমগীর বাংলানিউকে জানান, আমাদের যোগাযোগের অন্যতম বাহন হলো লঞ্চ। হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদীতে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। উচ্চবিত্ত যাত্রীরা স্পিডবোটে যাতায়াত করতে পারলেও তা ব্যয়বহুল। খরচ বেশি হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের পক্ষ তা কখনো সম্ভব নয়।  

বরকল উপজেলার বাসিন্দা হাসান বাংলানিউজকে জানান, পুরো হ্রদ এখন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।  জেলা সদরের সঙ্গে এ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলার বাসিন্দা নাছের বাংলানিউজকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় আমাদের উপজেলায় পুরো এলাকায় যোগাযোগ করতে পারছি না। যে কারণে আমাদের প্রতি মূহূর্তে বিপদে পড়তে হচ্ছে।  

আমাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হলো লঞ্চ। প্রত্যেক বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। কিন্তু এ নিয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই বললেই চলে।  

তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, হ্রদের জায়গাগুলো শনাক্ত করে সেসব স্থানে জরুরিভাবে ড্রেজিং করা হোক। হ্রদে ড্রেজিং করা হলে দু’দিকে লাভ হবে। একদিকে হ্রদের নাব্যতা ফিরে আসবে অপরদিকে মাছের উৎপাদন বেড়ে যাবে বহুগুণে। যাতায়াতেও বিঘ্ন ঘটবে না।

পরিবেশবাদী ললিত চাকমা বাংলানিউজকে জানান, কাপ্তাই হ্রদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা জরুরি। এছাড়া হ্রদেও  দূষণ বাড়ছে প্রতিদিন। কাপ্তাই হ্রদে প্রতিদিন ব্যাপক হারে বর্জ, পলিথিন ও ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে দিন দিন নাব্যতা সংকট বেড়েই চলেছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) একেএম মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং করার ব্যাপারে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। খুব শিগগিরই ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হতে পারে।

ডিসি আরও বলেন, কাপ্তাই হ্রদ সম্পর্কে সবার সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এই হ্রদ এই এলাকার মানুষের সম্পদ। তাই এই সম্পদকে টিকিয়ে রাখা আমাদের, আপনাদের  সবার নৈতিক দায়িত্ব। আমরা সবাই একটু সচেতন হলে হ্রদের দূষণ ও হ্রদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম  বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যারা লঞ্চ মালিক তারা বার বার বাংলাদেশ নৌ অভ্যন্তরীণ অধিদপ্তরকে লেক ড্রেজিং করার ব্যাপারে চিঠি লিখেছি। কিন্তু কোনো গতি দেখছি না। এ বিষয়ে  স্থানীয় প্রশাসনকেও একাধিকবার বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।