ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

‘শুনতে চাই কারা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৯
‘শুনতে চাই কারা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত’ সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী

ঢাকা: ‘শুনতে চাই কারা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জানতে চাই কাদের কারণে মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না। বুঝতে চাই মানুষ কতটা সেবা পাচ্ছে। কারণ, আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না’, বলেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, ‘আমরা আসবো যাবো, কাঁধে কোনো দায় নেবো না, এটা হতে পারে না। যারা সচ্ছতার সঙ্গে কাজ করবেন, তারা চাকরিতে থাকবেন।

যারা অস্বচ্ছ হবেন, দুর্নীতির সঙ্গে থাকবেন, তাদের চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে হবে অথবা অন্য কোথাও চলে যেতে হবে।

আমি যতদিন এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছি, আমি চাইব মন্ত্রণালয়সহ দপ্তর-সংস্থার সবাইকে সততার সঙ্গে, স্বচ্ছতার সঙ্গে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ’

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী আরো বলেন, ‘সেবা সহজীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হলে আমরা মন্ত্রণালয়সহ প্রতিটি দপ্তরে একটা অভিযোগ বাক্স রাখবো। ’

বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সেবা সহজীকরণ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আবাসন নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সকলের জন্য আবাসন, কেউ থাকবে না গৃহহীন। সেই লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সরকার কাজ করছে। যখন দেখি নাগরিকরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অথবা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাঙ্ক্ষিত আচরণ না পেয়ে অসহায় অবস্থায় ঘুরছে, তখন মনে হয় ওই জায়গায় আমি থাকলে একই কষ্ট আমার হতো। সেজন্য দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটাতে হবে, মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটাতে হবে, সেবাকে সহজ করতে হবে, স্বচ্ছতা আনতা হবে, সততা আনতে হবে। সুশাসন যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, মানুষের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না, নাগরিকগণ মৌলিক অধিকার পাবে না। যারা দায়িত্বে আছি সকলকে ভাবতে হবে জনগণ মালিক, তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। ’ 

গৃহায়ন ও গণপূর্ত আরো মন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে অনেক ভোগান্তির অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। দেড় কাঠা বা পৌনে দুই কাঠা জমির মালিকের একটা বিক্রয় অনুমতি বা একটা মিউটেশনের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। ’

তিনি বলেন, ‘নাগরিক সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমরা চিন্তা করলাম, গবেষণা করা দরকার মানুষের ভোগান্তি কেনো। নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অচলায়তন ভাঙার জন্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১২টি সংস্থা নিয়ে আমরা কাজ করছি। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পিয়ন থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান প্রত্যেকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। ’ 

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সেবা প্রদানের ২৬টি পর্যায়ের বিন্যাস করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে সেবা সহজীকরণের প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েই প্রথম মানুষের সেবা সহজ করার জন্য, ভোগান্তি কমানোর জন্য আমরা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছি। এটা একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ’

সরকার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নয় উল্লেখ করে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রয়োজনে রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে সরকার ভর্তুকি দেবে, কিন্তু জনগণের ঘাড়ে অতিরিক্ত ট্যাক্স চাপিয়ে তাদের কষ্ট বাড়ানো এবং তার ভেতর থেকে আমাদের সুবিধা নেয়া, এটা কাঙ্ক্ষিত নয়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ’

তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছতার ব্যাপারে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক অভিযোগে আমরা জর্জরিত। সে জন্য স্বচ্ছতার জায়গায় আসার জন্য আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে ১ জুন থেকে এবং রাজউকে ১ মে থেকে সমস্ত ব্যবস্থাকে আমরা অটোমেশন অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ে আসছি। বাড়িতে ল্যাপটপের মাধ্যমে অনলাইনে প্ল্যান সাবমিট করা যাবে, মিউটেশন আবেদন করা যাবে। রাজউক বা গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অফিসে যাওয়া লাগবে না। বাড়িতে বসে অগ্রগতি জানা যাবে। আমরা চাই আধুনিক বিশ্ব যেভাবে চলছে, আমরাও সেভাবে চলবো। নথি হারিয়ে যাওয়া থেকে উত্তরনের জন্য আমরা ডাটাবেজ সিস্টেম চালু করছি। সমস্ত নথি কম্পিউটারে অনলাইনে থাকবে, আপনিও আপনার ফাইলের অবস্থা দেখতে পাবেন। ’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজে ঘুষ খাই না, কমিশন নেই না। কাউকে ঘুষ খেতে দেবো না, কমিশন খেতে দেবো না। সিন্ডিকেটের ব্যুহ আমি ভেদ করবোই, এটা আমার আত্মবিশ্বাস। ব্যুহ ভেদ করতে না পারলে আমি হারিয়ে যাবো অথবা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যাদের কারণে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তারা হারিয়ে যাবে। সিন্ডিকেটের ব্যবসা কেউ করতে চাইলে তাদের ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে। ’

ব্রিফিং অনুষ্ঠানে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জনাব মো. রাশিদুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব মো. আখতার হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৯
আরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।