তারা বলেন, সারাবিশ্বে এখন ধর্মের নামে প্রতিহিংসা ও জঙ্গিবাদের আগুনে জ্বলছে। মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে শ্রীলঙ্কার বোমা হামলার ঘটনা নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ দাবি জানান।
এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম প্রথমে আলোচনায় অংশ নিয়ে এ প্রস্তাব করেন। এরপর বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। তারা মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্য সমর্থন করেন এবং একটি দিন নির্ধারণ করে এ বিষয়ে আলোচনার দাবি জানান।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, গত দুই মাসে দেশে-বিদেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে। হিংসা-প্রতিহিংসায় রক্তাক্ত হয়েছে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা। একজন মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত প্রতিহিংসার আগুনে ছাড়খার হয়ে গেলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মমতাময়ী হাত নুসরাতকে রক্ষা করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই সংসদ সদস্য শেখ সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরীর ছবি দেখলে মানুষের মন কেঁদে ওঠে। সবাই কেঁদেছে। নিষ্পাপ এই শিশুটি বিদেশে নিহত হলো জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়ে। জায়ানের ছবি দেখে মনে পরে ১৫ আগস্টের নিষ্পাপ রাসেলের কথা। এবিষয়গুলো নিয়ে প্রতিহিংসার আগুনে সারা দুনিয়া জ্বলছে। ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে। আমি নোটিশ দিয়েছি এ ব্যাপারে সংসদে সাধারণ আলোচনা হওয়া উচিত।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, শিশু জায়ানের মৃত্যু গোটা দেশের মানুষকে ব্যাথিত করেছে। অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। শোক প্রকাশ করার ভাষা আমাদের জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটা শান্তির দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু নুসরাত হত্যাকাণ্ড সমগ্র বাঙালি জাতির হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। একজনকে ছাড়া সব অপরাধী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়েছে। নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পরেও অনেকস্থানে শিশুদের নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। এটা হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সামাজিক অবক্ষয় চলতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধী উপলব্ধি করতে না পারবে যে অপরাধ করে ছাড় পাবো না, ততোদিন পর্যন্ত এ অবক্ষয় বন্ধ হবে না। দ্রুত এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিকাষ্টে ঝুলাতে হবে। নইলে এসব বন্ধ হবে না।
রাশেদ খান মেনন বলেন, নুসরাতের ঘটনা সাধারণভাবে দেখলে চলবে না। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন বন্ধে কমিটি গঠন করতে হবে। রাজধানীর হলি আর্টিজানে জঙ্গিবাদের তান্ডব আমরা দেখেছি। ওই ঘটনায় পর্যটন শিল্প প্রায় ধ্বংস হতে বসেছিল। এখন শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডে এসব ঘটনা ঘটেছে। তবে আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই। ইউটিউবে নানাভাবে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারেও নজর দিতে হবে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশ অনেকটা নিরাপরাধ অনেকেই বলার চেষ্টা করেন। জঙ্গি-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বাংলাদেশ এখনও নিরাপরাধ নয়। জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলো এখনও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্মের মুখোশধারী ধর্ম ব্যবসায়ীরা ক্রমাগত নারী-সংখ্যালঘু ও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।
ডা. রুস্তম আলী ফরাজী এ প্রসঙ্গে বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকার সফল হলেও আমরা শঙ্কিত শ্রীলঙ্কার ঘটনার পর। সম্প্রতি সামাজিক অবক্ষয়ের নানা চিত্র দেখা যাচ্ছে। ছোট ছোট শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ০২০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৯
এসকে/আরআইএস/