ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সব সময় ডর লাগে, কোন সময় মাথায় পড়ে!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৯
সব সময় ডর লাগে, কোন সময় মাথায় পড়ে!

দক্ষিণ জ্ঞানপাড়া (পাথরঘাটা) ঘুরে: দক্ষিণ চরদুয়ানী নেগাবানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অজপাড়াগাঁয়ের জরাজীর্ণ একটি বিদ্যালয়। জরাজীর্ণ না বলে সম্পূর্ণ ব্যবহারের অনুপযোগী বললেও ভুল হবেনা। উপর-নীচসহ চারদিক থেকে পলেস্তাতার খসে পড়ছে। বারান্দার খুঁটি দেখলে মনেই হবেনা এটি কোনো বিদ্যালয়ের বিল্ডিংয়ের খুঁটি। দরজা-জানালারও করুণ অবস্থা। সম্প্রতি ছাদের চুনকাম করে ফাটলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের একটি কক্ষের ছাদ দুই বছর আগে ভেঙে পড়ার পর দেওয়া হয়েছে টিনের চালা; এ যেন দেখার কেউ নেই।  

সরেজমিন বিদ্যালয় গিয়ে কথা হয় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে। মাহফুজা বলে, প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে আসি।

ক্লাস চলাকালীন ভয়ে থাকি। সব সময় ডর লাগে, কোন সময় মাথায় ছাদ পড়ে। মাঝে-মধ্যে ক্লাসের মধ্যেই ইট পড়ে। তারপরেও ক্লাস করি।

একই ক্লাসের শিক্ষার্থী নদী আক্তার বলে, বৃষ্টির দিনে বেশি ভয় লাগে। বাতাস হলে এ বুঝি বিল্ডিং ভেঙে মাথায় পড়বে। জরাজীর্ণ দক্ষিণ চরদুয়ানী নেগাবানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।  ছবি: বাংলানিউজ ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইসা মৃধা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সব সময়ই ঝুঁকিতে থাকি। বিশেষ করে কচিকাচা শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় বেশি। দ্রুত নতুন ভবন না দেওয়া হলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে দ্রুত ভবনের দাবি জানান তিনি। নেগাবানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা দেখে বাচ্চাদের পাঠাতে ভয় হচ্ছে। তারপরেও পাঠাতে হয়। তারা সব সময়ই দুশ্চিন্তায় থাকে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ জ্ঞানপাড়া নেগাবানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৫৯ সালে। ১৯৯০ সালে এ ভবনটি নির্মাণ হয়। বছর দু’য়েক আগে এ ভবনের একটি ক্লাস রুমের সম্পূর্ণ ছাদ ভেঙে গেলেও কোনো হতাহত হয়নি তখন। ওই কক্ষে ছাদের বিকল্প টিন দিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে।  জরাজীর্ণ দক্ষিণ চরদুয়ানী নেগাবানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।  ছবি: বাংলানিউজ এদিকে পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলায় মোট ১৪৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪টি বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকদিন আগে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ১০টি রয়েছে পরিত্যাক্ত। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোতে পলেস্তারা খসে পড়ছে, ফাটল দেখা দিয়েছে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের ভবনে, বৃষ্টির মৌসুমে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে অনেক বিদ্যালয়ে।  

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইউসুফ নেগাবান বাংলানিউজকে বলেন, ২ বছর আগে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষের ছাদ সম্পূর্ণ ভেঙে যায়, ভাগ্যক্রমে কোনো হতাহত হয়নি। সেই সময়ই বিদ্যালয় ভবনের জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছিল।  

বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ভবনের বাহ্যিক দিক বিবেচনা করে বিদ্যালয়গুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে পাথরঘাটাসহ বরগুনার ৬টি উপলোর ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পরে সেখান থেকে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।