ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বাড়তি আয়ের আশায় সন্তানের হাতে ভিক্ষার বাটি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৯
বাড়তি আয়ের আশায় সন্তানের হাতে ভিক্ষার বাটি

ময়মনসিংহ: কওমি মাদ্রাসায় পড়ুয়া সন্তান তালহাকে (৮) সঙ্গে নিয়ে থালা-বাটি হাতে ছুটছেন আব্দুল খালেক (৫০)। বাড়ি জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই গ্রামে। পথ চলতি মানুষ দেখলেই ‘ভাই কিছু দিয়া যান’ বলে হাঁক দিচ্ছেন। 

নিজে সুস্থ-সবল হলেও ভিক্ষুক সেজে অবস্থান করছেন নগরীর চরপাড়া মোড় এলাকার ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার সামনে। বিশেষ দিনে ভিক্ষুক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার কৌশলে বেশ দক্ষই মনে হলো খালেককে।

 

কথা হয় আব্দুল খালেকের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘একলা ভিক্ষার থালা নিয়া ঘুরলে কেউ তো টেহা দিবো না। কইবো গাউ-গতর ভালা তোমারে ভিক্ষা দিমু কে? তাই পোলাডারে লইয়া ভিক্ষার মাঠে নাইম্যা গেছি। ’ 

ত্রিশালের বৈলর এলাকা থেকে আসা ফাতেমা (৪৫) গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করেন বছর তিনেক ধরে। পেশাদার এ ভিক্ষুক মুসলমানদের ভাগ্য রজনীর রাত বলে বিবেচিত পবিত্র লায়লাতুল বরাতকে ঘিরে নিজের ছেলে সাদ্দাম হোসেনকেও (১২) ভিক্ষুকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন।

একই উপজেলার গোলাপি (২৪) তার দুই ছেলে ইসরাফিলকে কোলে নিয়ে নগরীর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার খানিকটা দূরে একটি ভিক্ষা করার মতো সুবিধাজনক জায়গায় বসে পড়েছেন। ভিক্ষার টাকায় নিজের সংসার চালাতে হয় তাকে।

তিনি বলেন, আড়াই বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছি। ভিটেমাটি আর কিছুই নেই। বাড়তি আয়ের আশাতেই বড় ছেলে আকাশের (১০) হাতে ভিক্ষার থালা তুলে দিয়েছি।  

আব্দুল খালেক, ফাতেমা বা গোলাপির মতো আরও অনেকেই নিজের সন্তানকে ভিক্ষুক সাজিয়ে অবস্থান নিয়েছেন ময়মনসিংহ নগরীর ভিক্ষুকের হাটে।  

রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ নগরীর ভাটিকাশর গোরস্থান, কালিবাড়ি, গুলকিবাড়ী গোরস্থানসহ বেশ কয়েকটি ভিক্ষুকের হাট ঘুরে দেখা মেলে এমন বাস্তব চিত্রের।  

একই চিত্র দেখা যায়, নগরীর বড় মসজিদ, স্টেশন রোড মসজিদ, কাঁচারি মসজিদসহ নগরীর প্রায় প্রতিটি মসজিদের সামনেই। প্রতিটি মসজিদের সামনেই ভিক্ষুকের ছড়াছড়ি। জেলার আশেপাশের বিভিন্ন জেলা, জামালপুর, নেত্রকোণা থেকেও নগদের আশায় পাড়ি জমিয়েছেন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার ভিক্ষুক।  

পেশাদার ভিক্ষুকের পাশাপাশি মৌসুমী ভিক্ষুকের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়। সূত্র জানায়, মৌসুমী ভিক্ষুকদের দিন-রাত ভিক্ষা বাণিজ্যের একটি ভাগ যাবে পেশাদার ভিক্ষুকদের থালা-বাটিতে। এ নিয়ে আবার কোথাও কোথাও বচসার ঘটনাও ঘটছে।  

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোনো ভিক্ষুকের চলার শক্তি নেই। কারো হাত নেই, কারো পা, কারো শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত। কঙ্কালসার হয়ে গেছে শরীর। এমন অসহায় ভিক্ষুকরাই আয় উপার্জন করছেন বেশি এমনটি জানালেন নেত্রকোণার জারিয়া এলাকা থেকে আসা পেশাদার ভিক্ষুক সুইটি বেগম (৩৫)।  

সুইটি বাংলানিউজকে জানান, তিনি ভিক্ষুকদের একটি টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন। তার টিমে রয়েছে কমপক্ষে ১০ জন সদস্য। এরমধ্যে নিজেদের শিশু সন্তানরাও রয়েছে।

ময়মনসিংহ সমাজ কল্যাণ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করতে ২০১০ সালে মন্ত্রণালয় থেকে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সেই সময় ময়মনসিংহ ও জামালপুরের ৬৬ জন ভিক্ষুককে রিকশা, ভ্যান ও মূলধন দেয়া হয়। কিন্তু সেই উদ্যোগ কাজে লাগেনি। পরবর্তীতে ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত জেলার ১৩টি উপজেলায় সাড়ে ৭ হাজার ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়।  

এরপরও এতো ভিক্ষুক কেন, জানতে চাইলে ডিসি সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ভিক্ষুককে ইতোমধ্যেই পুনর্বাসন করা হয়েছে। শবে বরাতে বাড়তি আয় রোজগারের আশায় অনেক মৌসুমী ভিক্ষুক সেজেছেন। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৯ 
এমএএএম/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।