ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নুসরাত হত্যা: দায় স্বীকার হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ৫ জনের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৯
নুসরাত হত্যা: দায় স্বীকার হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ৫ জনের নুসরাত হত্যায় অংশ নেওয়া সবাই দায় স্বীকার করেছেন

ফেনী: আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার সঙ্গে কিলিং স্পটে সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এর মধ্যে রোববার (১৪ এপ্রিল) ফেনীর সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার অন্যতম আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে কিভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে, কারা ঘটিয়েছে, কোন আঙ্গিকে ঘটিয়েছে, বিষয়গুলো।

তার স্বীকারোক্তিতেই উঠে আসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন ও কাউন্সিলর কমসুদুর রহমান মকসুদসহ অন্যদের নাম।
 
শামীম অপরাধ স্বীকার করেছেন, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এখানে কয়েকজন সংশ্লিষ্ট ছিলেন, পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছেন। তারা কারাগার (কারাগারে বন্দি হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা) থেকে হুকুম পেয়েছেন। এ বিষয়গুলোর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।

এর আগে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে এ সংক্রান্ত জবানবন্দি দেন উম্মে সুলতানা পপি (শম্পা)। তিনি জানিয়েছেন, নুসরাতকে হত্যার উদ্দেশে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে সে-ই ছাদে ডেকে নিয়ে গেছে। তার নাম পপি হলেও হত্যাকাণ্ডের দিন হত্যাকারীরা তার পরিচয় গোপন রেখে  ‘শম্পা’ নামে ডাকে। সেজন্য নুসরাতও তাকে ডেকে নেওয়া বোরকাপরিহিত ছাত্রীটির নাম শম্পা বলে গিয়েছিল।

আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পপি জানায়, সে নুসরাত হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। নুসরাতের বান্ধবী নিশাতকে কেউ মারছে বলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় সে। তারপর অন্য সহযোগীরা মিলে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

কয়েক ঘণ্টাব্যাপী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পপি এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিয়েছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে একই জবানবন্দি দেন জাবেদ ও কামরুন্নাহার মনি। আদালতে তাদের উপস্থাপন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী জবানবন্দি রেকর্ডের পর রাত ১০টার দিকে তাদের জবানবন্দির ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পিবিআই’র চট্টগ্রাম বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার মো. ইকবাল।

তিনি বলেন, আদালতে এ দু’জন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, তারা তাদের সহপাঠী নুসরাত জাহান রাফি হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। জাবেদ নুসরাতের পুরো শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেন। আগুন ভালো করে লাগার জন্য মনি নুসরাতের বুকসহ শরীর চেপে ধরেন।

সর্বশেষ রোববার (২১ এপ্রিল) বিকেলে একই আদালতে জবানবন্দি দেন সাইফুর রহমান মো. জোবায়ের। জোবায়ের আদালতে স্বীকারোক্তি দেন যে, ঘটনার দিন তিনি কিলিং মিশনে সরাসরি অংশগ্রহণ করে নুসরাতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেন এবং ম্যাচের কাঠির মাধ্যমে আগুন ধরিয়ে দেন।
 
এছাড়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নুর উদ্দিন, হাফেজ আবদুল কাদের ও আবদুর রহিম শরীফ। তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকলেও কিলিং স্পটে ছিলেন না।  

গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিমের আরবি পরীক্ষার প্রথম পত্র দিতে গেলে মাদ্রাসায় দুর্বৃত্তরা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ দিন পর ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান।

পরদিন ১১ এপ্রিল বিকেলে তার জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ১০ এপ্রিল থেকে মামলাটির দায়িত্ব পায় পিবিআই। তারপর থেকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হন ২০ জন আসামি, আদালতে জবাবন্দি দিয়েছেন ৭ জন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৯
এসএইচডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।