ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সম্পত্তি-পরকীয়ার টানে রিয়াজকে হত্যা করেন তার স্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৯
সম্পত্তি-পরকীয়ার টানে রিয়াজকে হত্যা করেন তার স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: স্ত্রীর সম্পত্তির লোভ ও পরকীয়ার কারণে খুন হন চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর এলাকার বা‌সিন্দা ও দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজ (৪০)।

রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে বরিশাল মেট্রোপলিটন ‍পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা।

তিনি বলেন, স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আমিনা আক্তার লিজা (৩০)।

আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতে রিয়াজের স্ত্রী লিজা ছাড়া আরো দু’জন জড়িত। তাদের একজনের নাম মাসুম ও অন্যজন হাই উল্লাহ বলে জানা গেছে। মাসুম নিহত রেজাউল করিমের সহকারী ও লিজার পরকীয়া প্রেমিক।

মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা বলেন, ঘটনার পর বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে লিজা ও নিহতের ভাইকে আমরা থানা হেফাজতে রাখি। পরে লিজার দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নিহতের ভাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত মাসুমসহ বাকি দু’জনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

ঘটনার বিবরণে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, চার বছর আগে বন্দর থানাধীন চরকাউয়া এলাকার দেলোয়ার খানের মেয়ে আমিনা আক্তার লিজার সঙ্গে চরমোনাই ইউনিয়নের রাজধর গ্রামের ছত্তার হাওলাদারের ছেলে রেজাউল করিমের বিয়ে হয়। এর আগে লিজার দুইবার ও নিহত রিয়াজের একবার বিয়ে হয়েছিলো। আগের বিয়ে বিচ্ছেদের পর তারা নতুন সম্পর্কে জড়ান।

তিনি বলেন, লিজার আগের স্বামী ছিলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধ। তার কাছ থেকে জমি ও বাড়ি কৌশলে লিখে নিয়ে বৃদ্ধকে তালাক দেন আমিনা আক্তার লিজা। আর রেজাউল করিম আগের স্ত্রীর সঙ্গে ১০ বছর সংসার করার পর তাকে তালাক দেন। লিজা রিয়াজকে বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে না থেকে রাজধর গ্রামের শাহজাহান ভূঁইয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

লিজার বরাত দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, যেহেতু রেজাউলের আগের সংসারে কোনো সন্তান হয়নি এবং লিজারও কোনো সন্তান নেই।  এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিলো। এছাড়া পলাশপুরের ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি লিজা তার নামে লিখে দিতে বললেও তাতে রাজি ছিলেন না স্বামী রেজাউল। ঘটনাক্রমে রিয়াজের সহকারী মাসুমের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান লিজা। মাসুম তাকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি রেজাউলের চেয়েও লিজাকে বেশি সুখে রাখবেন। এসব চিন্তা করে লিজা তার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী লিজা মাসুমের সাহায্যে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রেজাউলকে খাওয়ান। এর আগেই ঘরের ভেতর পরকীয়া প্রেমিক ও তার সহযোগীকে লুকিয়ে রাখেন লিজা। এরপর রেজাউল ঘুমিয়ে পড়লে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে তিনজন মিলে তাকে ক্ষুর (ধারালো অস্ত্র) ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। ঘটনা অন্যদিকে ঘোরাতে খাটের নিচে সিঁদ কাটা হয়। পরে মাসুম ও তার সহযোগী সেখান থেকে পালিয়ে গেলে লিজা পোশাক পাল্টে ফেলেন এবং ঘরের বাইরে এসে চিৎকার করতে থাকেন।

মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা বলেন, ৯৯৯-এ ফোন করে রেজাউলকে হত্যার কথা পুলিশকে জানানো হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে সিঁদ কাটা দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়, কারণ ওই পথে কেউ ঘরের ভেতর ঢোকার আলামত ছিলো না। আর ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর বিষয়টিও সামনে এলে রিয়াজের স্ত্রী লিজাকে আটক করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। লিজাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও হত্যার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের মধ্য দিয়ে ঘটনার রহস্য খুব অল্প সময়ে উদঘাটন সম্ভব হয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি)  রুনা লায়লা, সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রাসেল, বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) বশির আহমেদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৯
এমএস/একে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।