শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে ছাগলনাইয়া বাজারের জিরো পয়েন্টে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা ছাত্রলীগ (জাসদ) মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার।
ছাগলনাইয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আলমাস হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা আঞ্জু, ফেনী জেলা জাসদের সভাপতি কাজী আবদুল বারী, উপজেলা জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অলি উল্যাহ ভূঁঞা ফাহাদ, সাংবাদিক জাকের হায়দার সুমন, শেখ কামাল, এবিএম নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন।
এর আগে একই দাবিতে ফেনী ল’ কলেজের অধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট এ কে এম মাজহারুল হক চৌধুরীর (রাশেদ মাযহার) নেতৃত্বে কলেজের শিক্ষক মণ্ডলী, বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারী, ফেনীর বিবেকবান প্রতিবাদী জনতা কলেজ ক্যাম্পাসে সামনে (শিশু নিকেতন কালেক্টরেট স্কুল এর সামনে) মানববন্ধনে মিলিত হয়।
কলেজের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল্লাহ, প্রভাষক কামরুল ইসলাম, শিরিন আক্তার রত্না, মহি উদ্দিন, মইনুল হোসেন ও রহিমা খাতুনসহ কলেজের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মাসেদুল আবেদীন, আলা উদ্দিন, এনামুল হক শাহেদ এবং প্রাক্তন বর্তমান শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে কলেজ অধ্যক্ষ তার বক্তব্যে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান।
‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক, অরাজনৈতিকসহ যারা যারা হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করতে চেয়েছিল সবাইকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান এবং সব অসুন্দর এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ’
এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে মাদ্রাসা ছাত্ররাও। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
সকালে শহরের কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কে বি এম জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য মাহতাব উদ্দিন মুন্না, অধ্যক্ষ মাওলানা ফারুক আহমাদ, উপাধ্যক্ষ মাওলানা মাহমুদুল হক, সহকারী অধ্যাপক মুফতি মাওলানা আবদুল হান্নান, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিন মানিক, গণিত বিভাগের প্রভাষক এস এম দিদারুল আলম চৌধুরী, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ বিন হারুন প্রমুখ।
মানববন্ধনে মাদ্রাসার শিক্ষক ও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, আর কোনো শিক্ষার্থী যেন শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে জীবন দিতে না হয়। তাই অপরাধীদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে আর কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সুযোগ না পায়।
মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ন্যাশনাল চিল্ড্রেন'স টাস্ক ফোর্স (এনসিটিএফ) ফেনী জেলা। ফেনীর মেয়ে নুসরাত হত্যাসহ সারাদেশে শিশুদের প্রতি শ্লীলতাহানি, নিপীড়ন, সহিংসতা বন্ধে ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও মৌন প্রতিবাদ কর্মসূচিটি ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে ফেনী জেলা এনসিটিএফ এর প্রায় দুই শতাধিক সদস্য। যার একাংশ এনসিটিএফ ফেনী জেলার বিভিন্ন স্কুল কমিটির সদস্য। এতে আরো উপস্থিত থাকেন ফেনী জেলা এনসিটিএফের উপদেষ্টারা।
মানববন্ধনে এনসিটিএফ ফেনী জেলার সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা নুরুল আবছার ভূঁইয়া, এনসিটিএফ উপদেষ্টা ইমন উল হক, শেখ ফরিদ রতন, হুমায়ুন মজুমদার ও জেলা সেচ্ছাসেবক ফারজান আরা ডায়ানা।
মানববন্ধনে রাফির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। মুখে কালো কাপড় বেঁধে এনসিটিএফ সদস্যরা মৌন প্রতিবাদ জানায়।
মানববন্ধনের আগে এনসিটিএফ সদস্যরা ফেনীর মিজান রোডে অবস্থিত ফেনী জেলা পরিষদ ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ফেনী জেলা শাখা থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রাটি শহরের মিজান রোড হয়ে ট্রাংক রোড শহীদ মিনার চত্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মানববন্ধন ও মৌন প্রতিবাদ করে পরবর্তীতে নুসরাতসহ সারাদেশে শিশুদের প্রতি অত্যাচার, শ্লীলতাহানি বন্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর ফেনীর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজজামানের মাধ্যম এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যায় নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদ দিলে সে ওই বিল্ডিংয়ের তিন তলায় যায়। সেখানে মুখোশপরা চার/পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। সে অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৯
এসএইচডি/আরবি/