ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘সাংগ্রের মঙ্গল জল বয়ে আনবে শুভ বারতা’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৯
‘সাংগ্রের মঙ্গল জল বয়ে আনবে শুভ বারতা’ তরুণীরা পছন্দের তরুণকে জল ছিটাচ্ছেন। ছবি: বাংলানিউজ

কক্সবাজার: নাচে-গানে নানা আনন্দায়োজনে পর্যটন শহর কক্সবাজারে শুরু হয়েছে আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের সাংগ্রেপোয়ে বা জলকেলি উৎসব। রাখাইনদের বৃহত্তম সামাজিক উৎসবকে ঘিরে শহরের অন্তত বিশটি প্যান্ডেলে চলছে আনন্দ মুখর এ আয়োজন। সব ধরনের জীর্ণতা ধুয়ে-মুছে সাংগ্রে’র মঙ্গল জল সবার জীবনে শুভ বারতা বয়ে আনবে এবারের উৎসবেরও এই আহ্বান।

এ উৎসবে রাখাইন সম্প্রদায়ের পাশাপাশি সামিল হয়েছে পর্যটকসহ দেশি-বিদেশিসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। বুধবার(১৭ এপ্রিল) বিকেলে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এ উৎসব সম্পন্ন হবে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল)।

রাখাইন সম্প্রদায়ের মতে, জলকেলি বা পানি খেলা বা সাংগ্রেপোয়ে উৎসবের মধ্য দিয়ে রাখাইন সম্প্রদায় রাখাইন নববর্ষ-১৩৮১ মঘাব্দকে বরণ করছে। আর পুরনো বছরের সব দুঃখ-দুরদশা, জীর্ণতা, গ্লানি আর অশুভ সব কিছুকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরে সাংগ্রের এ মঙ্গল জল সবার জীবনে বয়ে আনবে অনাবিল সুখ আর শুভ বারতা। জল ছিটানোর জন্য প্রস্তুত তরুণীরা।  ছবি: বাংলানিউজঐতিহ্যবাহী ‘সাংগ্রে পোয়ে’ স্থানীয়দের কাছে জলকেলি বা পানি খেলা হিসেবে পরিচিত। উৎসবের দিনে রাখাইন নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোরেরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহকারে বৌদ্ধ বিহারে যান। সেখানে ধর্মীয় আচার আনুষ্ঠানিকতা সেরে সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে, নেচে গেয়ে আসেন প্যান্ডেলে। এভাবেই নানা আনন্দ মুখরতায় তারা বিভিন্ন পেন্ডেল পরিদর্শন করেন। এ উৎসবকে ঘিরে রাখাইন পল্লিগুলোকে নতুন করে সাজানো হয়। পছন্দের তরুণের সঙ্গে গল্পে মজেছেন তরুণী।  ছবি: বাংলানিউজউৎসবস্থল ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বড় রাখাইন পাড়া, ফুলবাগ, টেকপাড়াসহ বিভিন্নস্থানে প্রায় ২০টি প্যান্ডেলে সাংগ্রে পোয়ে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

বুধবার দুপুর থেকে রাখাইন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী এবং আবাল বৃদ্ধবনিতা দলে দলে এক প্যান্ডেল থেকে অন্য প্যান্ডেলে যাচ্ছে। প্যান্ডেল প্রদক্ষিণে চলছে বাঁধভাঙা আনন্দ। প্যান্ডেলে গিয়ে তরুণ-তরুণীরা পছন্দের মানুষের শরীরে মঙ্গল জল ঢেলে উদযাপন করছে সাংগ্রে পোয়ে। শুধু রাখাইন সম্প্রদায় নয়, এ আনন্দ থেকে বাদ যায়নি বিদেশি পর্যটক এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও। সবাই নেচে গেয়ে, একে অপরের শরীরে জল ছিটিয়ে উৎসবে একাকার। তবে এবারে শহরের বড়ক্যাং’র সামনে খোলা মাঠে বড় মঞ্চ করে সেই কনসার্টের আয়োজন করা হয়নি। অন্যান্য বছর এই মঞ্চ দেশি-বিদেশি শিল্পীর গান আর উৎসব প্রাঙ্গণ হাজারো তরুণ-তরুণীর অসাধারণ নৃত্যে মুখর থাকলেও এবার চির চেনা সেই দৃশ্যে চোখে পড়েনি।

উৎসবে আসা রাকাইন সম্প্রদায়ের নেতা ড. আছিং রাখাইন বাংলানিউজকে বলেন, যুগ যুগ ধরে রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব  উদযাপন করে আসছে। শুধু কক্সবাজার শহরে নয়, চৌফলদন্ডী, মহেশখালী রামু,চকরিয়ার হারবাংসহ বিভিন্ন রাখাইন অধ্যুষিত জনপদে সাংগ্রে পোয়ে উৎসবে মেতে ওঠেছে রাখাইন সম্প্রদায়। প্যান্ডেলে নৃত্য পরিবেশন করছেন তরুণীরা।  ছবি: বাংলানিউজতিনি বলেন,  এ উৎসব শুধু রাখাইনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।

উৎসবস্থলের দিকে দেখিয়ে তিনি বলেন, শুধু রাখাইন নয়, দেখতেই পাচ্ছেন এখানে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি বিদেশিরাও যোগ দিয়েছে। অনেক পর্যটকও এ উৎসব উপভোগ করছেন।

রাখাইন ডেভেলভমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং বাংলানিউজকে জানান, চৈত্র সংক্রান্তি থেকে রাখাইনদের এ উৎসব শুরু হয়। চলে সপ্তাহজুড়ে। উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব ‘পানি খেলা’। বৈশাখের চতুর্থ দিন থেকে শুরু হয় এ উৎসব।   পুরনো বছরকে বিদায়, নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি মঙ্গল জলে সিক্ত হয়ে সব গ্লানি, অবসাদ দূর হবে। নতুন আলো, নতুন দিন, নতুন স্বপ্ন কড়া নাড়বে বাঙালি জাতির দুয়ারে। এই আহ্বানে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বাংলানিউজকে বলেন, যুগ যুগ ধরে কক্সবাজারে রাখাইন সম্প্রদায়ের এ ঐতিহ্যবাহী উৎসব উদযাপন হয়ে আসছে। প্রাণের এ উৎসবকে ঘিরে তিনদিন ধরে কক্সবাজারে এক অসাম্প্রদায়িক চিত্র ফোটে ওঠে। বাংলাদেশের এ ধরনের উৎসবের মধ্য দিয়েই আমরা দিন দিন আরো সমৃদ্ধ হবো, গড়বো ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৯
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।