ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বন্যায় ভাঙা ব্রিজ সংস্কার হয়নি ২০ মাসেও, দুর্ভোগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৯
বন্যায় ভাঙা ব্রিজ সংস্কার হয়নি ২০ মাসেও, দুর্ভোগ

দিনাজপুর: দিনাজপুরে প্রবল বন্যায় সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের একটি ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার ২০ মাস পেরিয়ে গেলেও এটি সংস্কার করেনি কর্তৃপক্ষ। সে কারণে প্রতিদিন ওই এলাকার ১০ হাজার মানুষ ও ছোট-বড় কয়েকশ’ যানবাহনকে যাতায়াত করতে হচ্ছে ব্রিজের পাশে ফসলি জমির ওপর দিয়ে। এতে যেমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন জনসাধারণ। তেমনি যানবাহন ও মানুষের যাতায়াতের করণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের জমি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনাজপুর সদরের চেহেলগাজী ইউনিয়নের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) পেছনে কর্ণাই গ্রামের হাজীপাড়ার ওই ব্রিজটি সংস্কারের জন্য কয়েক দফায় চিঠি দিলেও ফল মেলেনি। সেজন্য হতাশ খোদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানই।

 

একটি সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের আগস্টের বন্যায় ভেঙে পড়া ব্রিজটি নির্মাণের জন্য দুইবার ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও রাজনৈতিক কারণে ঠিকাদার নিজেদের কার্যাদেশ নিজেরাই বাতিল করেছেন। যদিও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খুব শিগগির ব্রিজটি নির্মাণের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জেলার আবহাওয়াবিদদের মতে, দিনাজপুরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা ছিল ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের ওই বন্যা। সে বছরের ১০ আগস্ট থেকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে ভারী বর্ষণ হয়। ১৩ আগস্ট দিনাজপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পুনর্ভবা নদীর কয়েকটি বাঁধ ভেঙে শহর ডুবে যায়। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যায় জেলার সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়ে। ভেঙে যায় ১৫টির অধিক ছোট-বড় ব্রিজ-কালভার্ট। সেসময়ই ভেঙে পড়েছিল কর্ণাই গ্রামের ওই ব্রিজটিও।
ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন যাতায়াত করতে হচ্ছে ফসলি জমির ওপর দিয়ে।  ছবি: বাংলানিউজ
সরেজমিনে কর্ণাই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজটি ২০ মাস ধরে একইভাবে ভেঙে পড়ে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙা ব্রিজটির পাশে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়। তবে সাঁকোটি দিয়ে শুধু মানুষই হেঁটে যাতায়াত করতে পারছে। এরমধ্যে আবার সাঁকোটি কিছু অংশও ভেঙে গেছে। ব্রিজটির পাশেই বাঁশেরহাট গ্রামের ব্যবসায়ী মোস্তাফা হোসেনের ধানী জমি। এই জমির বেশ কিছু অংশ এখন ‘বাইপাস সড়ক’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ওই জমিসহ এর আশেপাশের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

কৃষকরা জানান, ফসলি জমি রাস্তা হিসেবে ব্যবহারের কারণে আশপাশের জমির ধানসহ অন্যান্য ফসল আবাদ কমে গেছে। জমিও নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন এ বাইপাস রাস্তাটি দিয়ে ট্রাক, ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। এ সড়ক দিয়ে কর্ণাই হাজীপাড়া, হিন্দুপাড়া, আদিবাসীপাড়া, বৈধ্যপাড়া, মালদইপাড়া, বালাপাড়া, হঠাৎপাড়ার প্রায় ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। পুনর্ভবা নদী ঘাটে প্রতিদিন বালু উত্তোলন করতে যায় অসংখ্য ট্রাক্টর। দীর্ঘ ২০ মাসের মধ্যে ব্রিজটি নির্মাণের জন্য দুইবার টেন্ডার হলেও ঠিকাদাররা রাজনৈতিক কারণে নিজেরাই নিজেদের কার্যাদেশ বাতিল করেছেন।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রয়াত সাবেক এক সংসদ সদস্যের ছোট ভাই ব্রিজটি নির্মাণের ব্যাপারে ঠিকাদারদের কাছে চাঁদা দাবি করায় ঠিকাদাররা কার্যাদেশ বাতিল করে পিছু হটেছেন। আর ব্রিজ নির্মাণের ব্যাপারে এলজিইডিসহ বিভিন্ন বিভাগে কয়েক দফায় চিঠি দিয়েও ফল না মেলায় হতাশ চেহেলগাজী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বাদশা।
প্রশাসন পক্ষ থেকে তৈরি করে দেওয়া বাঁশের সাঁকো।  ছবি: বাংলানিউজ
কর্ণাই হঠাৎপাড়ার ভ্যানচালক রাজ কুমার বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ ৬ বছর ধরে কর্ণাই থেকে বাঁশেরহাট হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যান চালিয়ে আসছি। কিন্তু ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের বন্যায় ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় ভ্যান চালাতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। পরবর্তীতে প্রশাসন একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দিলেও সেটিতে ভ্যান চালানো যায় না। একবার ভ্যান চালাতে গিয়ে যাত্রী নদীতে পড়ে গিয়েছিল।  

তিনি বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই সাঁকোতে ভ্যান চালাতে নিষেধ করা হয়েছে। পরে মোস্তফা হোসেনের জমি দিয়ে অস্থায়ী ‘বাইপাস সড়ক’ তৈরি করা হয়। কিন্তু সেটাও ঝুঁকিপূর্ণ। ধানের জমি দিয়ে ‘বাইপাস সড়ক’ হিসেবে যাতায়াতের কারণে অনেক সময় চাকা দেবে যাওয়াসহ দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া মূল সড়ক থেকে প্রায় ১০ ফুট নিচে ফসলের জমি হওয়ায় আতঙ্কের মধ্য দিয়ে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়।  

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, ‘কর্ণাই গ্রামের ব্রিজটি নির্মাণের ব্যাপারে এলজিইডি, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ অসংখ্য বিভাগে অনেক চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসছেন ব্রিজটি নির্মাণের ব্যাপারে কথা বলতে। কিন্তু কী করবো, আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার যে কিছু করার নেই, সেই কথাটি সাধারণ মানুষকে কিভাবে বোঝাবো?’

যোগাযোগ করা হলে দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, ‘কর্ণাই গ্রামের ব্রিজটি নির্মাণের ব্যাপারে খুব শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৯
জিপি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।