খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবদুল কাদের সোনাগাজী আমিরাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব সফরপুর গ্রামের মনছুর খান পাঠান বাড়ির আবুল কাসেমের ছেলে। তার বাবা সাহেবের হাটের চা দোকানি।
কাদের সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক। ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি অধ্যক্ষ সিরাজের অনুগত হিসেবে মাদ্রাসার হোস্টেলে থাকতেন। নুসরাত হত্যাকাণ্ডে স্বীকারোক্তি প্রদানকারী নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম তাদের স্বীকারোক্তিতে আবদুল কাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
ঘটনার দিন হাফেজ আবদুল কাদের গেট পাহারার দায়িত্বে ছিলেন এবং ঘটনার আগের দিন ৫ এপ্রিল খুনের পরিকল্পনার বৈঠকে ছিলেন। গ্রেফতারকৃত আসামিরা তার হোস্টেলে বৈঠক হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
৭ এপ্রিল মালামাল নিয়ে হোস্টেল থেকে চলে যান আবদুল কাদের। পরদিন ৮ এপ্রিল তার গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের খবর জানতে পেরে বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
১২ এপ্রিল ঘটনার রহস্য উদঘাটনের পর আবদুল কাদেরের নাম আসায় ওইদিন বিকেলেই বসতঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান আবদুল কাদেরের বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। তার এক ভাই দিনমজুর, এক ভাই মালদ্বীপ প্রবাসী ও এক ভাই ঢাকায় একটি কারখানায় চাকরি করেন। তিন বোন বিবাহিত। আবদুল কাদের অবিবাহিত। বাড়ির লোকজনদের সঙ্গেও রয়েছে তার পরিবারের সদস্যদের বিরোধ। ছয় শতক জমির মধ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে নির্দিষ্ট সীমানায় বসবাস করছে তার পরিবার।
কয়েক মাস আগে ব্র্যাক থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে এবং আবদুল কাদেরের উপার্জনের টাকা দিয়ে বসতঘরের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। কাদেরের সেই টাকার উৎস নিয়েও এলাকাবাসীর মধ্যে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা আজগর হোসেন ও জসিম উদ্দিন জানান, আবদুল কাদেরের আচরণ সন্দেহজনক ছিলো। গ্রামবাসীও সোচ্চার হয়েছেন। কাদেরকে দেখামাত্র আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হবে।
তার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় রহস্য আরো ঘনীভূত হচ্ছে। পিবিআই এজাহারভুক্ত ৮ আসামির মধ্যে ৭ আসামিসহ ১৬ জন সন্দেহভাজন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও শুধুমাত্র আবদুল কাদেরকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইএ’র পরিদর্শক মো. শাহ আলম জানান, আবদুল কাদেরকে ধরতে পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা হবে।
গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারীরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।
আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যায়।
শ্লীলতাহানির মামলায় আগে থেকেই কারাবন্দি ছিলেন সিরাজ উদদৌলা। হত্যা মামলা হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। সিরাজ উদদৌলার ‘ঘনিষ্ঠ’ নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতে।
এদিকে, শ্লীলতাহানির অভিযোগ করতে থানায় যাওয়ার পর নুসরাতের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ায় সোমবার (১৫ এপ্রিল) সোনাগাজী থানার তৎকালীণ ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে একটি মামলা হয়েছে। এ মামলাও তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
এসএইচডি/আরবি/