ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্র্যাকে ঝড় তুলবে ২৫ এপ্রিল 

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
‘বনলতা এক্সপ্রেস’ ট্র্যাকে ঝড় তুলবে ২৫ এপ্রিল  বনলতা এক্সপ্রেসের ট্রায়াল রান/ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী: অবশেষে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চালু হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত বিরতিহীন ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেস। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৫ এপ্রিল রেলওয়ে ট্র্যাকে ঝড় তুলবে কালের সেনসেশন 'বনলতা এক্সপ্রেস'। 

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ওইদিন সকাল ১০টায় ট্রেন উদ্বোধন উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রেনটির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।

মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খোন্দকার শহিদুল ইসলাম তাকে জানিয়েছেন, আগামী ২৫ এপ্রিল বিরতিহীন ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেসের উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রেনটির শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন উপস্থিত থাকবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য সকাল ৭টার পরিবর্তে সকাল ১০টায় রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে ট্রেনটি। তবে অন্য দিন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী চলবে।  

বনলতা এক্সপ্রেসমেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আরও জানান, এটি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। তাই রাজশাহী-ঢাকা বিরতিহীন ট্রেন চালু ও ট্রেনটি অনুমোদন দেওয়ায় তিনি রাজশাহীবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞা জানান।

এ বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) খোন্দকার শহিদুল ইসলাম।  

তিনি জানান, রেল মন্ত্রণালয় থেকে টেলিফোনে তাদের জানানো হয়েছে- আগামী ২৫ এপ্রিল রাজশাহী-ঢাকা রুটের বিরতিহীন নতুন ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু করা হবে। সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ট্রেনটির উদ্বোধন করবেন। এজন্য তাদের সব রকম প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

পহেলা বৈশাখের দিনে ট্রেনটির উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল উল্লেখ করে জিএম খোন্দকার শহিদুল ইসলাম বলেন, নতুন ট্রেনের যন্ত্রাংশসহ সব ধরনের টেকনিক্যাল কাজ শেষ করতে এরই মধ্যে কিছুটা সময় লেগে গেছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রেনটি চালুর জন্য সিটি মেয়রের দাবি থাকায়, তা ২৫ এপ্রিলই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।  

বললতা এক্সপ্রেসের আসনএর টিকিট কবে এবং কখন থেকে পাওয়া যাবে প্রশ্নে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার ফুয়াদ হোসেন আনন্দ বাংলানিউজকে জানান, ২৫ এপ্রিল থেকে নতুন ট্রেন চালু হবে এটা ঠিক। তবে এর কাগজপত্র এখনও এসে পৌঁছায়নি। তাই এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না এর টিকিট কবে এবং কখন থেকে পাওয়া যাবে। তবে অফিসিয়াল কাগজ পাওয়া মাত্র তা সার্কুলেট করা হবে।  

নতুন ট্রেনের টিকেটিংয়ের প্রচলিত নিয়ম যেভাবে আছে, ঠিক সেভাবেই ছাড়া হবে বলেও উল্লেখ করেন ডেপুটি চিফ কমার্সিয়াল ম্যানেজার।

রাজশাহী-ঢাকার মধ্যে প্রথম বিরতিহীন ট্রেনের ‘বনলতা এক্সপ্রেস’ নামটি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন ট্রেন সার্ভিসে ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা নতুন বগি যুক্ত করা হবে। রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে বেলা ১১টায়। আবার একইদিন ট্রেনটি রাজশাহীর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে দুপুর দেড়টায়। রাজশাহী রেলস্টেশনে পৌঁছাবে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়।

এই প্রথম দেশের আন্তঃনগর কোনো ট্রেনে উড়োজাহাজের মতো বায়োটয়লেট সংযুক্ত হচ্ছে। এ কারণে মলমূত্র আর রেললাইনের ওপরে পড়বে না। স্টেশনে দাঁড়ানো থাকা অবস্থায়ও যাত্রীরা টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন। প্রথমবারের মতো ট্রেনটিতে রিক্লেনার চেয়ার বসানো থাকবে। যেখানে পা এবং হেলান দেওয়ার আরামদায়ক সুবিধা রয়েছে। আর এসি বাথের কেবিনে বেডরেস্ট দেওয়া হবে। যা রাতে বিছিয়ে দিলে ছোট খাটের মতো হয়ে যাবে। এছাড়া কেবিনে ওপরের সিটে ওঠার জন্য স্টিলের মইয়ের বাদলে সিঁড়ি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, নতুন ট্রেনের মোট বগির সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ার ৭টি, এসি ২টি, একটি পাওয়ার কার, দু’টি গার্ডব্রেক ও একটি খাওয়ার বগি। ট্রেনটিতে মোট আসন সংখ্যা হবে ৯২৮টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ারের ভাড়া হতে পারে ৩৭৫ টাকা। আর স্নিগ্ধার (এসি চেয়ার) ভাড়া হতে পারে ৭১৯ টাকা।  

এছাড়া ৮৬৩ টাকায় পাওয়া যেতে পারে এসি কেবিন আর ১ হাজার ২৮৮ টাকায় মিলতে পারে এসি বাথ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলপথ মন্ত্রণালয়ে এ ভাড়া প্রস্তাব করেছে। যা চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে।

বিদ্যমান ট্রেনগুলোতে এখন ৩৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা লাগে। এতে রাজশাহী-ঢাকা ট্রেন ভ্রমণে সময় বাঁচবে আড়াই ঘণ্টা। প্রস্তাবিত সময়সূচি অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ট্রেনটি দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে রাজশাহী পৌঁছাবে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়। রাজশাহী থেকে সকাল ৭টায় ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে বেলা ১১টায়। বিরতিহীন চার্জ হিসেবে বিদ্যমান ভাড়ার সঙ্গে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে ভ্রমণকারীদের।

বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা রুটে মোট তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু আছে। এগুলো হলো- পদ্মা, ধূমকেতু ও সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস। শুরুতে এসব ট্রেন যেক’টি স্টেশনে থামতো, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি স্থানে থামছে। বর্তমানে ১৪টি স্টপেজ রয়েছে আন্তঃনগর এই ট্রেনগুলোর।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
এসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ