ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বর্ষবরণে উন্মুখ রাজশাহী, চারুকলায় প্রাণের স্পন্দন

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৯
বর্ষবরণে উন্মুখ রাজশাহী, চারুকলায় প্রাণের স্পন্দন বর্ষবরণে রাজশাহীতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: 'বাংলা নববর্ষ' বাঙালির সার্বজনীন একটি উৎসবের দিন। ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরিব ও জাত-পাত ভুলে বাঁধভাঙা আনন্দে মেতো ওঠার দিন।  ১৬ কোটি বাঙালির আবেগ আর ভালোবাসায় মিশে আছে এই উৎসব। তাইতো বর্ষবরণে উন্মুখ হয়ে উঠেছে বাঙালি জাতি। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাত পোহালেই বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ।

চিরায়িত সুরে, শাশ্বত রঙে রাঙিয়ে সব জীর্ণতা ও শীর্ণতা মুছে ফেলে নববর্ষের নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার লক্ষ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসন দুই দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

পুরনো বছরের গ্লানি মুছে নতুনের প্রত্যাশায় বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তাই প্রস্তুত সবাই। বর্ষবরণের সেই উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাতেও।

বাঙালির সংস্কৃতিকে ধারণ করে ‘বাংলা নববর্ষ-১৪২৬’ কে স্বাগত জানাতে রাত-দিন এক করে দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাই আবহমান বাংলার মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে রাবির চারুকলা অনুষদের বিস্তৃত আঙ্গিনা।

আবেগের যেন কমতি নেই। বাঙালি ঐহিত্যের চিরন্তন সংস্কৃতিকে ধারণ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ’ গানের সুরে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চলছে বর্ষ বরণের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনটিকে বরণ করতে রাবির বিভিন্ন বিভাগ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

সরেজমিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ চত্বর গিয়ে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতিতে সেখানকার শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাংলার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার কাজ জোড়তালে এগিয়ে চলছে।

প্রতিবছরের মতো এবারও চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে অনুষদ প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে কেন্দ্র করে চারুকলা অনুষদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। প্রতিবছর চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। এ শোভাযাত্রার বিশেষত্ব হল প্রতিবছর সমসাময়িক বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন থিম ফুটিয়ে তোলা হয়। বর্ষবরণের প্রস্তুতিতে দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। উদযাপনের মূল আকর্ষণ মঙ্গল শোভযাত্রাকে মাথায় রেখে চলছে যত আয়োজন। শোভাযাত্রার জন্য পুরো উদ্যোমে চলছে রংবেরংর ডামি বানানোর কাজ। এছাড়াও থাকছে যন্ত্রসঙ্গীত, আবৃত্তি, নাটক, ও নৃত্যানুষ্ঠান।

মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক বলেন, ‘বর্ষবরণের আয়োজনে বাঙালির সংষ্কৃতিকে শতভাগ ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করি আমরা। এবার ঘোড়া, হাতি ও ময়ুরের প্রতিকৃত। তৈরি করা হয়েছে। ঘোড়ার প্রতিকৃতি ‘গতি’র বার্তা বহন করবে। এটি দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে থাকা বাংলাদেশে অর্থনীতির বর্তমান গতিকে উপস্থাপন করবে। আর ময়ূরের নাচ ও রঙিন পালক উৎসবের আমেজকে নির্দেশ করবে। হাতির প্রতিকৃতি বাংলাদেশের ধাবমান বৃহৎ অর্থনীতির প্রতীক হিসেবে বার্তা বহন করবে'।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর শোভাযাত্রার জন্য রং-বেরঙের মুখোশ তৈরি করা হলেও এবার রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার কথা মাথায় রেখে মুখোশ তৈরি করা হচ্ছে না। আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এবারের উৎসবটি আমরা ভালোভাবে উদযাপন করতে পারবো বলে আমি আশাবাদী’।

বর্ষবরণের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ থেকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আশা করছি প্রতিবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে বৈশাখ উদাযাপিত হবে। এছাড়া বাংলা, নাট্যকলা ও সঙ্গীত, আইন, মার্কেটিং, ফোকলোরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল বিভাগের পক্ষ থেকে বর্ষবরণের ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের জানিয়েছেন বর্ষবরণ উপলক্ষে দিন জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে সকলকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বর্ষবরণ-১৪২৬ উপলক্ষে ১৪ এপ্রিল (রোববার) সকাল ৮টায় রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুলে গিয়ে শেষ হবে। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। পরে সকাল ৯টায় একই স্কুলে রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

বেলা ১১টায় রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে ‘বাংলা নববর্ষ ও বঙ্গবন্ধু’ বিষয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা এবং বিকেল ৪টায় সরকারি মাদ্রাসা স্কুল মাঠে ঐতিহ্যবাহী টমটম দৌড় প্রতিযোগিতা ও গ্রামীণ খেলাধুলা আয়োজন করা হবে।

দিনটি উপলক্ষে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, সব হাসপাতাল, শিশু পরিবার ও শিশু সদনে (এতিমখানায়) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে বিকেলে। এ সময় কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সন্ধ্যায় বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সকাল থেকে মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর ও জিয়া পার্ক সর্বসাধারণের জন্য বিনা টিকিটে সকাল-সন্ধ্যা উন্মুক্ত রাখা হবে। বর্ষবরণ উপলক্ষে রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুল, রাজশাহীতে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী ও শিশু আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।