ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্কের গভীরতা-ব্যাপ্তি বাড়ছে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
‘বাংলাদেশ-ভুটান সম্পর্কের গভীরতা-ব্যাপ্তি বাড়ছে’

ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের নেতৃত্বে ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা ও ব্যাপ্তি আরও বাড়ছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি পণ্য প্রবেশ সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের মধ্যে হওয়া একান্ত এবং দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

পড়ুন>>বাংলাদেশ-ভুটান ৪ সমঝোতা, ১ এসওপি সই

বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন সেক্টরে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও ভুটান চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই করেছে।

 

এসব সমঝোতা স্মারক ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর সই এর ফলে দুই দেশের মধ্যে কার্গো ট্র্যান্সপোর্টেশন, স্বাস্থ্য, কৃষি, পর্যটন খাতের সহযোগিতা বাড়বে। পাশাপাশি এসব খাতের প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়াতে দুই দেশের জনপ্রশাসন ট্রেনিং সেন্টার প্রশিক্ষক বিনিময় করবে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠক, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং এমওইউ সইয়ের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্কই যে গভীর হচ্ছে তা নয়, এর ব্যাপ্তিটাও বাড়ছে। ব্যবসা ক্ষেত্রেও প্রসার ঘটছে।  

‘ভুটানের সঙ্গে আমাদের খুবই গভীর ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিরাজমান। ভুটান প্রথম রাষ্ট্র যারা আমাদের স্বীকৃতি দেয়। ভুটানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গাঢ়। পরবর্তী বছরগুলোতে সম্পর্ক আরো উন্নতি হয়েছে। ক্রমশই এ সম্পর্ক গভীর ও সম্প্রসারণ হচ্ছে। ’

শহীদুল হক বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরের পর বাণিজ্য বেড়েছে এবং মানুষে মানুষেও সম্পর্ক বাড়ছে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক গেছে ভুটানে। ভুটান থেকেও এসেছেন আমাদের দেশে।  

ডিউটি ফ্রি-কোটা ফ্রি পণ্য সুবিধার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভুটান আমাদের কাছে ১৬টি বিষয়ে ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিষয়টি দেখবেন। আশা করা যায়, এটা হবে।

তিনি বলেন, আমরা ১০টা পণ্যে কোটা ও শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছি। ভুটান ডব্লিউটিওর সদস্য না হওয়ায় তাদের নিজস্ব কিছু প্রথা আছে। তাই কোটামুক্ত, শুল্কমুক্ত প্রশ্ন উঠছে। তারাও বেশকিছু জিনিসে কোটা ও শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে।
আমরা ধরে নিতে পারি যে কোটা ও শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়ে নীতিগত সম্মতি হয়েছে।

আঞ্চলিক কানেকটিভিটি বিষয়ে শহীদুল হক বলেন, ট্রানজিটের ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের উদ্যোগ এ অঞ্চলে আছে। বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া, নেপাল) সড়ক ও রেল কানেকটিভিটির জন্য। সব রাষ্ট্র সই করেছে। কিন্তু এটা অনুসাক্ষরের বিষয়ে ভুটান তাদের পার্লামেন্টে পাঠাতে পারেনি। এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিবিআইএন নিয়ে লোটে শেরিংয়ের নেতৃত্বাধীন ভুটানের নতুন সরকার ইতিবাচক জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা এই বিষয়টি আলোচনার জন্য আপার সিনেটে নিয়ে আসবে। তারা খুবই আশাবাদী।

বৈঠকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের   প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের অটিজম নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এর জন্য মানবকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।

ভুটান বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব।

বাংলাদেশ-ভুটান ৪ সমঝোতা, একটি এসওপি সই
দ্বি-পক্ষীয় বাণিজ্য এবং কার্গো পরিবহন বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন নৌ পরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদ এবং ভুটানের পক্ষে সই করেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য বিভাগের পরিচালক সোনম তেনজিন।

স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্বারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এবং ভুটানের স্বাস্থ্য সচিব ডা. উজেন দফু।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার রিসার্স কাউন্সিলের এবং ভুটানের কৃষি ও বন মন্ত্রণালয় পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার রিসার্স কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. কবির ইকরামুল হক এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম তোবদেন রাবগি।

জনপ্রশাসনে পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বাংলাদেশ জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ সেন্টারের রেক্টর এম আসলাম আলম এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম তোবদেন রাবগি।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং ভুটানের পর্যটন কাউন্সিলের মধ্যে পর্যটন সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সেই করেন পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ জামান খান কবির এবং ভুটানের পক্ষে সই করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত সোনম তোবদেন রাবগি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
এমইউএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।