ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘অহন বৈশাখ আইলেও আমরার কদর নাই’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
‘অহন বৈশাখ আইলেও আমরার কদর নাই’

হবিগঞ্জ: ‘আগের দিনে ছইত (চৈত্র) মাসের শেষের দিগ আইলেই (দিক আসলেই) মাটির গরু, ছাগল, ব্যাংকসহ কতো জাতের জিনিসপত্র বানাইতে লাগতাম (তৈরি শুরু করতাম)। ফুরা (পুরো) বৈশাখ মাস জুইড়াই ইতা (এসব) দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুইরা ঘুইরা বেছতো বেডা মানুষরা (ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতো পুরুষরা)। এক মাসেই রুজি (আয়) অইয়্যা যাইতো (হতো) তিন থেকে চার মাসের খাওয়ন (সংসার) খরচ। কিন্তু গেলো কয়েক বছর ধইরা বৈশাখ মাস আইলে আমরারে কেউ জিগায় ওই না (জিজ্ঞেস করে না)। জিনিসপত্র বানাইলেও বেছতাম পাড়ি না আগের মতন। অহন (এখন) বৈশাখ মাস আইলেও আমরার কদর নাই (চাহিদা নেই)।‘

এভাবেই বাংলানিউজের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছিলেন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নগর কুমারপাড়ার কণিকা দাস।  

তিনি বলেন, তাদের পাড়ায় শতাধিক পরিবারের বসবাস।

যাদের আয়ে পথ একটাই- মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি। এ আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার। কিন্তু মানুষজন এখন আর বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির জিনিসপত্রে মজে না। গ্রামে গ্রামে মেলার আয়োজন হলেও আগের মতো জমে না। মানুষজন আধুনিকতার দিকে ঝুঁকে পড়ায় এসব ক্রয়ে আগ্রহ নেই কারও। এতে তাদের জীবন ধারণ হয়ে পড়েছে অত্যন্ত কষ্টকর।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নগর কুমারপাড়ার মৃৎশিল্পীদের তৈরি করা সরা ও হাঁড়ি।  ছবি: বাংলানিউজ
একই এলাকার মৃৎশিল্পী মুকুল পাল বাংলানিউজকে বলেন, তার মা শিলা দাস মাসের পর মাস কাজ করে তৈরি করতেন হাজার হাজার মাটির জিনিসপত্র। বৈশাখের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতেন মেলায় ঘুরে ঘুরে। কিন্তু দিন দিন কালের আবর্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে তাদের এ শিল্প। এ ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

কানাই লাল দাস বাংলানিউজকে বলেন, পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও তিনি এ পেশায় জড়িত রয়েছেন। আয়-রোজগার না থাকায় অনেকেই পেশা বদল করে অন্য কাজে লেগে পড়েছেন। সন্তানদের লেখাপড়া তো দূরে থাক, সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে তার পক্ষে। তিনিও অন্য কোনও কাজ পেলে এ পেশা ছেড়ে দিবেন বলে জানান তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু আজমিরীগঞ্জেই নয়; জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশত কুমারপাড়া রয়েছে। তাদের অনেকেই এখন এ পেশা থেকে সড়ে দাঁড়াচ্ছেন। এতে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প দিন দিন বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞ মহল।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকীল বাংলানিউজকে বলেন, উন্নত দেশগুলোতে তাদের নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষায় সহায়ক জনগোষ্ঠীকে ধরে রাখতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। শুধু কুমার নয়, বাংলাদেশের অনেক শিল্প কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। বাঙালি ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে এদের ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে সরকার।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলুল জাহিদ পাভেল বাংলানিউজকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ হস্তশিল্প ধরে রাখতে কাজ করছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন পহেলা বৈশাখে হবিগঞ্জেও তিন দিনব্যাপী মেলার আয়োজন রয়েছে। সেখানে স্থাপন হবে ২০ থেকে ২৫টি স্টল।  

এসব স্টলে মাটির জিনিসপত্রসহ বিভিন্ন হস্ত ও কুটির শিল্প সামগ্রী থাকবে বলে আশাবাদী তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।