ঢাকা, রবিবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৬ মে ২০২৪, ১৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

নুসরাতের জানাজার মাঠেই আছে অপরাধীরা: আলাউদ্দিন নাসিম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
নুসরাতের জানাজার মাঠেই আছে অপরাধীরা: আলাউদ্দিন নাসিম

সোনাগাজী (ফেনী) থেকে: দুর্বৃত্তদের আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির নামাজে জানাজায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার এবং আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেছেন, আসামিরা খুব বেশি দূরে নয়, এ জানাজার মাঠেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে ফেনীর সোনাগাজী মো. সাবের সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা-পূর্ব বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।  

আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম বলেন, নুসরাত হত‌্যাকাণ্ডের আসামিরা যদি ৪০ হাত মাটির নিচেও থাকে, তাদের সেখান থেকে বের করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

নুসরাত পুরো বাংলাদেশের একটি প্রেরণার নাম। নুসরাত দেখিয়ে গিয়েছে কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয়।  

এই ছাত্রীর আত্মার মাগফেরাতও কামনা করেন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

নুসরাতের বাবা মাওলানা মাওলানা এ কে এম মুসা বলেন, আমার মেয়ের আত্মা তবেই প্রশান্তি পাবে, যদি সে সুবিচার পায়। আমি আমার মেয়ের হত‌্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।  

নুসরাতের ভাই নোমান বলেন, আমার বোন দীর্ঘ ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। বোন আমার যে কষ্ট করেছে, তা বলে বোঝানো যাবে না। আইসিইউতে আমার বোন বাবার কাছে ক’ফোটা পানি চেয়েছিল, বাবা দিয়েছিলেন সেই পানি। আমি আমার বোন হত‌্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে নুসরাতের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা পড়ান তার বাবা মাওলানা এ কে এম মুসা।  

এসময় আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ছাড়াও ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক এনামুল করিম, সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল পারভেজ প্রমুখ।  

জানাজায় সোনাগাজীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজারো মানুষ অংশ নেন।

এর আগে বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে নুসরাতের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। সঙ্গে ছিলেন নুসরাতের মা-বাবা ও ভাইয়েরা।

সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চর চান্দিয়া এলাকার মেজো মৌলভী বাড়িতে মরদেহ এসে পৌঁছালে সর্বস্তরের মানুষ শেষবারের মতো নুসরাতকে দেখতে আসে। এসময় ওই বাড়িতে তৈরি হয় শোকাবহ পরিবেশ। পড়ে যায় কান্নার রোল।  

তারও আগে ঢামেক হাসপাতাল মর্গে নুসরাতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে মরদেহ তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বড় আকারে দগ্ধ হওয়ার কারণেই নুসরাতের মৃত্যু হয়েছে।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।  

পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসায় গঠিত হয় ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নত চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোরও পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু সবার প্রার্থনা-চেষ্টাকে বিফল করে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে মারা যায় ‘প্রতিবাদী’ নুসরাত।

এ ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। তারই জেরে মামলা করায় নুসরাতকে আগুনে পোড়ানো হয়। শ্লীলতাহানির ওই মামলার পর সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

আগুনে পোড়ানোর ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে সাত দিনের এবং ওই মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন, নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নুর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শাহিদুল ইসলামকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে পাঠান আদালত। বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি এবং এজহারনামীয় মাদ্রাসাছাত্র জোবায়ের আহমেদকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৯
এসএইচডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।