ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘অভিযোগের পাহাড়’ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
‘অভিযোগের পাহাড়’ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থীকে আগুনে ঝলসে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় যে নামটি বারবার আসছে তিনি হলেন ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা। 

শুধু একটি-ই নয়, তার বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে জেল কাটলেও কমেনি তার অপরাধপ্রবণতা।

 

যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করায় ছাত্রীকে আগুনে ঝলসে হত্যা চেষ্টার পর এসব বিষয় ফের নতুন করে সামনে এসেছে।  

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় অপরাধ করলেও তা প্রথমে প্রকাশ পায় ২০০৭ সালে। অভিজ্ঞতার সনদ জাল করে অধ্যক্ষের চাকরি নেয়ার ঘটনা নিয়ে ওই সময় সাপ্তাহিক জহুর পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।  

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময় সিরাজ উদদৌলা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সদস্য ছিলেন। এরপর তার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ হিসেবে দুর্নীতিরও অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকে দীর্ঘ হতে থাকে তার অপকর্মের তালিকা।  

২০১৮ সালে আলিম দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। উপবৃত্তির টাকা দেবে বলে যৌন হয়রানি করে ওই শিক্ষার্থীকে। এ ঘটনায় ওই সময় মাদ্রাসায় এবং সোনাগাজী এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে প্রভাবশালীদের মধ্যস্থতায় রেহায় পান ওই অধ্যক্ষ।  

স্থানীয় পত্রিকা সাপ্তাহিক নোয়খালী কণ্ঠের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরও মাদ্রাসার এক ছাত্রী তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। ওই ছাত্রীকে প্রায়ই ডেকে নিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন সিরাজ।  

এছাড়া তার সিরাজের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলাও রয়েছে। ওই মামলায় গ্রেফতার হয়ে বেশ কিছুদিন কারাগারেও ছিলেন তিনি। দুনীতি ও অনিয়মের অভিযোগে এক সময় জামায়াত ইসলামী থেকেও বহিষ্কৃত হন সিরাজ।  

জেলা জামায়াতের আমির একেএম শামছুদ্দিন বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজের অপকর্মের কথা সোনাগাজীর মানুষ আগে থেকেই জানে।  

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এর আগে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের সালামতিয়া মাদ্রাসা থেকে সিরাজ উদদৌলাকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে নোয়াখালীর বসুরহাটের রঙ্গমালা ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকেও চাকরি হারাতে হয়েছে তাকে।  

সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আগে থেকেই সিরাজের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিলো। তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ আগেও ছিলো। সর্বশেষ ২৭ মার্চ ছাত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পরপরই তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। মেয়েটির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক-এটাই চাওয়া।  

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২০ বছর ধরেই এই মাদ্রাসায় আছেন সিরাজ। এর আগেও একাধিকবার তার বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। প্রায় প্রতিবারই প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। অপকর্ম আড়াল করতে তার নিজস্ব কিছু ভক্ত ছাত্রের গ্রুপ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার অর্থ অনিয়মেরও অভিযোগ রয়েছে।
 
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসাটি ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই গ্রুপিং রয়েছে। একটি পক্ষ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার পক্ষে অবস্থান করে আসছিল। আরেকটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে কাজ করছে। মেয়েটির বিষয়টি জানাজানির পর দুই গ্রুপ পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি পালন করে।  

এদিকে এ সব ঘটনায় তবে বর্তমানে কারাগারে থাকায় এসব অভিযোগের ব্যাপারে অধ্যক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  

এদিকে এ ঘটনায় গ্রেফতার সাতজনের মধ্যে রিমান্ডে রয়েছেন আটট চার আসামি। তারা হলেন- নুর হোসেন, কেফায়েত উল্যাহ, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও সাহিদুল ইসলাম। আটক বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদর জন্য সোনাগাজী মডেল থানায় রাখা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (০৯ এপ্রিল) ওই ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আগে দেয়া এজাহার পরিবর্তন করে আটজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে।  

আসামিরা হলেন- মামলার প্রধান আসামি সোনাগাজী ইলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ এস এম সিরাজ উদদৌলা, ইংরেজির প্রভাষক আবছার উদ্দিন, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম মাকসুদ, ছাত্র শাহদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের।

এর মধ্যে বুধবার (১০ এপ্রিল) সকালে এজাহারভুক্ত আসামি জোবায়ের আহমেদকে গ্রেফতার করা হযেছে।  

গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে কেন্দ্রে গেলে ওই ছাত্রীকে ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নেয়ার চাপ দেয় মুখোশধারী ৪/৫জন।  

কিন্তু অস্বীকৃতি জানালে মেয়েটির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।  

পরে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে ওই মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ(ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

তবে এই অবস্থায় তার প্লেনভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ঢামেক বার্ন ইউনিটেই চিকিৎসা চলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
এসএইচডি/এএটি/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।