ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

১৪ জেলার ৫৯৫ জন চরমপন্থির আত্মসমর্পণ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৯
১৪ জেলার ৫৯৫ জন চরমপন্থির আত্মসমর্পণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে আত্মসমপর্ণ করছেন চরমপন্থিরা। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: দেশের ১৪টি জেলার পূর্ববাংলার সর্বহারা, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা), নিউ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও কাদামাটি নামের ৪টি চরমপন্থি সংগঠনের ৫৯৫ জন চরমপন্থি আত্মসমর্পণ করেছেন। এসময় তারা ৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৭৫টি দেশীয় অস্ত্র জমা দেন। 

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করেন।

আত্মসমর্পণ শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ভুল বুঝে যারা উগ্রবাদ চরমপন্থি সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন, তারা নিজেদের ভুল উপলব্ধি করতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করছেন।

 

দস্যু, মাদক কারবারী ও চরমপন্থিরা সবাই একে একে আত্মসমর্পণ করছেন। আমাদের পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে ১০ বছর আগের বাহিনীর তুলনা করা চলবে না। কারণ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত দক্ষ। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে পার পাওয়া যাবে না। যে সব চরমপন্থি সদস্যরা আত্মসমর্পণ করলেন তারা যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন।  

আত্মসমর্পণকারীদের আইনি সহায়তার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করবে সরকার।

বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।  ছবি: বাংলানিউজস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বিগত ১৯৯৯ সালেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২ হাজার চরমপন্থি সদস্য আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।  

তিনি বলেন, যারা এখনও আত্মসমর্পণ করেননি তারা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করলে তাদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে।  

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, পাবনার এই অনুষ্ঠানে যে সব চরমপন্থি আত্মসমর্পণ করলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষিত। তাদের যোগ্যতার ভিত্তিত্বে প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার নির্দেশনা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার বিকেলে পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ১৪টি জেলা থেকে মোট ৫৯৫ জন চরমপন্থি আত্মসমর্পন করেন। এর মধ্যে পাবনা জেলার ১৩২ জন, ফরিদপুরের ২৭, রাজবাড়ীর ৩৪, সিরাজগঞ্জের ৬৯, নাটোরের ২৭, নওগাঁর ৭০, বগুড়ার ১৫, টাঙ্গাইলের ৩১, রাজশাহীর ৬০, খুলনার ৩৫, নড়াইলের ২, যশোরের ২, সাতক্ষীরার ৬ ও জয়পুরহাট জেলার ৮২ জন চরমপন্থি দলের নেতা-কর্মী রয়েছেন।
 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আত্মসমর্পণকারী  চরমপন্থিদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে সরকার আইনের আওতায় সার্বিক সহায়তা দেবে।  

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ২০ বছর পরে আবার আজকের এই আত্মসমর্পণ। জঙ্গি ও মাদক বিক্রেতা অনেকেই পুলিশের সহযোগিতায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে।  

তিনি বলেন, পুলিশের অনেক সদস্য উগ্র জঙ্গিদের হাতে প্রাণ দিলেও তারা জঙ্গিবাদ দমন করতে সক্ষম হয়েছে। উগ্রপন্থা এমন একটা রাস্তা ছিল যেন সেখান থেকে আর বেরুতে পারবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা তা পরিবর্তন করেছেন।  

বাম থেকে আত্মসমপর্ণকারী চরমপন্থিরা ও জমা দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্র।  ছবি: বাংলানিউজআত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে নওগাঁ জেলার পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) প্রধান আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবু তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় চারু মজুমদারের আদর্শে সমাজ বিপ্লবের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব ভেবেই চরমপন্থি সংগঠনে যোগ দেই। কিন্তু দলের আদর্শ, কথা ও কাজের মিল না থাকায় অন্ধকার জগতে পড়ে যাই।  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সারা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছি। ভাবতে ভালোই লাগছে। যারা এখনো আসেননি তাদের বলি ফিরে আসুন।

পাবনা জেলার পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) প্রধান ইকবাল শেখের স্ত্রী রত্না খাতুন প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, তার স্বামী এ সংগঠন করায় পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ছেলে মেয়েদের ভালো স্কুলে পড়াতে পারিনি। অন্ধকার জীবনের চেয়ে শান্তির পথ অনেক ভালো। তিনি তাদের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।     

পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াছমিন জলি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন ও পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।