ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নরসিংদীতে আগুনে একই পরিবারের ৪ জন দগ্ধ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৯
নরসিংদীতে আগুনে একই পরিবারের ৪ জন দগ্ধ

নরসিংদী: নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় আগুনে একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছে। দগ্ধদের প্রথমে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তথ্য সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুন ও রবিন নামে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। 

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ভোরে উপজেলার উত্তর বাখননগর ইউনিয়নের লোচনপুর গ্রামের বিপ্লবের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।  

দগ্ধদের মধ্যে তিন আপন বোন রয়েছে।

তারা হলেন- উপজেলার লোচনপুর গ্রামের সামসুল মিয়ার মেয়ে ও বিপ্লবের ছোট বোন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী প্রীতি আক্তার (১১), এসএসসি পরীক্ষার্থী মুক্তামণি (১৬), অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুইটি আক্তার (১৩) ও দগ্ধ অন্যজন তাদের ফুফু খাতুন্নেছা (৬০)।

দগ্ধের স্বজনদের অভিযোগ ঘরের ভেতরে পেট্রোল বোমা মারা হয়েছে। সেই আগুনে ওই চারজন দগ্ধ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘটনাস্থলে বড় ধরনের কোনো অগ্নিকাণ্ডের সত্যতা পাওয়া যায়নি। আর পুলিশের বক্তব্য, ঘটনাস্থলে পেট্রোলের কোনো গন্ধ বা তার কোনো আলামতের উপস্থিতি পাইনি।  

খবর পেয়ে নরসিংদী পুলিশ সুপার (এসপি) মিরাজ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিউর রহমান, রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে লোচনপুর গ্রামের দুলাল মিয়াদের সঙ্গে একই গ্রামের মৃত সামসুল মিয়ার ছেলে বিপ্লবদের দ্বন্দ্ব চলে চলছিল। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষ দুলাল মিয়া খুন হন। এরপর থেকে অভিযুক্ত বিপ্লবের পরিবার গাঁ-ঢাকা দেয়। অভিযুক্ত বিপ্লব হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় পলাতক রয়েছেন। কিন্তু তার পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা না থাকায় সোমবার (৮ এপ্রিল) ফুফুকে নিয়ে বিপ্লবের তিন বোন নিজ বাড়িতে আসেন। ভোরের দিকে হঠাৎ করে ঘরের চার পাশে আগুন ধরে যায়। এতে নিজ বাড়িতেই অগ্নিদগ্ধ হয় বিপ্লবের তিন বোন ও ফুফু।  

তবে কিভাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে তা জানাতে পারেননি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী।

দগ্ধ তিন বোনের  বড় বোন রত্ন আক্তার জানায়, প্রতিবেশী শিপন, কাজলদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা নিয়ে তাদের বিরোধ চলছিল। অনেক দিন আগে রায়পুরায় হত্যা মামলার মিথ্যা আসামি করা হয় তার দুই ভাই সোহাগ ও বিপ্লবকে। এখন তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরপর থেকে প্রতিপক্ষরা নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে।

মঙ্গলবার ভোরে সবাই বাসায় ঘুমিয়ে ছিল। তখন পাশের বাড়ির শিপন, কাজল, রবিন, লোকমানসহ কয়েকজন তাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় বলেও অভিযোগ করেন রত্ন আক্তার।

উত্তর বাখননগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সকালে খবর পেয়েছি বিপ্লবদের বাড়িতে আগুন লেগেছে। দৌড়ে ঘটনাস্থলে আসি। তবে সেখানে কাউকে পাইনি। শুনেছি, তাদের ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।

রায়পুরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার কাজী মোহাম্মদ রুমান বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাস্থলে বড় ধরনের কোনো অগ্নিকাণ্ডের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে একটি রুমে একটু আগুন জ্বলছিল। একটা কাঠের টুকরো দিয়ে আগুনকে ঘরের বাহিরে নিয়ে যাই। পরে তা পানি দিয়ে নেভানো হয়।

নরসিংদী পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাস্থলে পেট্রোলের গন্ধ বা তার কোনো আলামতের উপস্থিতি পাইনি। তবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আগুনে দগ্ধদের বিরোধ রয়েছে। বিরোধকে কেন্দ্র করে ৬ ফেব্রুয়ারি একটি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এর পর থেকে ভিকটিম বাড়িতে থাকতেন না। এ ঘটনায় তথ্য সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুন ও রবিন নামে দুইজনকে আটক করা হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মেডিকেল অফিসার ডা. এনায়েত কবির বাংলানিউজকে বলেন, চারজন দগ্ধ রোগীর সবার দুই হাতসহ মুখ ও শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এর মধ্যে খাতুন্নেছার ১২ শতাংশ, প্রীতির ১৫ শতাংশ, মুক্তামণির ১০ শতাংশ ও সুইটির ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৯/আপডেট সময়: ১৯০০ ঘণ্টা
এসআরএস/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।