ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছাত্রী হত্যাচেষ্টা: মামলার এজাহারে আসামি পরিবর্তন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৯
ছাত্রী হত্যাচেষ্টা: মামলার এজাহারে আসামি পরিবর্তন

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রীকে আগুনে পুড়ে হত্যাচেষ্টা মামলাটির এজাহার পরিবর্তন করে অজ্ঞাত চার মুখোশধারীসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এরা হলেন- অধ্যক্ষ এসএম সিরাউজদ্দৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, সাবেক ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নুর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের।

বাদী ওই ছাত্রীর ভাইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, অধ্যক্ষ সিরাউজদ্দৌলার নির্দেশে উল্লেখিত আসামিরা পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে তার বোনকে হত্যার উদ্দেশে অগ্নিসংযোগ করে।

সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

এছাড়া এ ঘটনায় থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি পুলিশ) পৃথক অভিযান চালিয়ে মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে।  

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ওই মাদ্রাসার নাইট গার্ড ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. মোস্তফা, দফতরি মো. নূরুল আমিন, মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র সাইদুল হক, অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া যুবক জসিম উদ্দিন, আলাউদ্দিন কেফায়েত উল্লাহ জনি, মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন ও আলিম পরীক্ষার্থী আরিফুল ইসলামসহ আরো দু’জন।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা দায়েরের পর যারা বিভিন্ন সময় মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়েছেন তাদের নামও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের সম্পৃক্ততাও ধারণা করা হচ্ছে।  

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, দ্রুত আসামিদের গ্রেফতারের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।  

এর আগে শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে সেই ছাত্রীর গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়।  

ওই ছাত্রীর ভাইয়ের ভাষ্য, ২৭ মার্চ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার পিয়ন নুরুল আমিনকে দিয়ে সেই ছাত্রীকে নিজের কক্ষে ডেকে নেন। তখন সেই ছাত্রী নিজের সঙ্গে আরো ৩-৪ জন বান্ধবীকে নিয়ে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকতে চাইলে সিরাজউদ্দোলা অন্যদের ঢুকতে না দিয়ে কেবল সেই ছাত্রীকে ঢুকতে দেন। এরপর দরজা বন্ধ করে তিনি ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। এমনকি পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে তাকে প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে জানিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর সিরাজউদ্দৌলা ওই ছাত্রীর শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করলে সেখানে কিছুক্ষণ ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। একপর্যায়ে ওই ছাত্রী দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে বাইরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায়। তখন খবর পেয়ে মাদ্রাসায় থাকা ওই ছাত্রীর ছোট ভাই অধ্যক্ষের কক্ষে ছুটে যায়। অধ্যক্ষ তখন তাকে জানান, তার বোন অসুস্থ। সেজন্য ছুটির আবেদন করতে এসে পড়ে যায়।

সেখান থেকে ওই ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে ওই ছাত্রী কিছুটা সুস্থ হয়। তখন সে স্বজনদের জানায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিলেন। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর মাদ্রাসা অধ্যক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ফোন করেন। আওয়ামী লীগের নেতা পুলিশসহ মাদ্রাসায় যান। তবে মাদ্রাসায় গিয়ে সব ছাত্র-ছাত্রীর মাধ্যমে সত্য ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ অধ্যক্ষকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলার পরের দিন সিরাজউদ্দৌলাকে আদালত পাঠানো হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।

ঘটনার বর্ণনায় ওই ছাত্রীর ভাই জানায়, শনিবার (৬ এপ্রিল) আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিলো তার বোনের। সকালে মাদ্রাসায় গেলে একজন সেই ছাত্রীকে বলে যে, ‘পাশের চারতলা ভবনের ছাদে তোমার বান্ধবীকে মারধর করা হচ্ছে’। এ কথা শুনে সে তখনই সেখানে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে বোরকা পরা চারজন ওই ছাত্রীকে ঘিরে ধরে এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। এই চাপ প্রত্যাখ্যান করায় সেই চারজন প্রথমে তাকে কিল-ঘুষি মারে। একপর্যায়ে তারা সেই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় ছাত্রীর চিৎকার শুনে সেখানে ছুটে যান পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রাসেল ও মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোস্তফা। পরে তারা ছাত্রীর গায়ে কার্পেট জড়িয়ে আগুন নেভান।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৯
এসএইচডি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।