ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অবহেলায় শ্রীমঙ্গলের শেখ রাসেল শিশু উদ্যান

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৯
অবহেলায় শ্রীমঙ্গলের শেখ রাসেল শিশু উদ্যান শ্রীমঙ্গলের শেখ রাসেল শিশু উদ্যান। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: কথা ছিল, এখানে একটি পরিপূর্ণ শিশু উদ্যান গড়ে উঠবে। বিকেলে স্থানীয় শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত হবে উদ্যান প্রাঙ্গণ। পাশাপাশি শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন বিনোদন সামগ্রীর মেলা বসবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার শেখ রাসেল শিশু উদ্যানে। 

কিন্তু কোথায় কী! তিন দশকের বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য শেখ রাসেলের নামে নির্মিত এ উদ্যানটিতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু নামকরণ আর সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ছাড়া।

এটি এখন শুধু নামেই শিশু উদ্যান।
 
শ্রীমঙ্গলের রাসেল শিশু উদ্যানে সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্যানের সীমানা প্রাচীরের একটি অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে। অন্য দেয়ালগুলোও হেলে পড়েছে। সবসময় তালাবদ্ধ থাকে উদ্যানের প্রধান ফটকটি। মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা খেলাধূলার জন্য ভেতরে প্রবেশ করতে না পারলেও ছিন্নমূল শিশুরা দেয়াল এবং প্রধান ফটকটি ডিঙিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এছাড়া জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়ে পড়েছে উদ্যানটি। সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চগুলোও ভেঙে গেছে। সংস্কৃতিকর্মীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠা মুক্তমঞ্চটির অবস্থা জরাজীর্ণ। সরকারি সহযোগিতা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে উদ্যানটি প্রায় ধ্বংসের পথে।

সূত্র জানায়, উদ্যানের এ জায়গাটি ডিসি খতিয়ানের অর্ন্তভুক্ত খাস জমি। ১৯৮৫ সালে সরকার জায়গাটি অধিগ্রহণ করে। পরে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জায়গাটির চারদিকে সীমানা প্রাচী তৈরির পাশাপাশি কিছু বেঞ্চও তৈরি করা হয়ে ছিলো। শ্রীমঙ্গল উপজেলার জয়নগর আবাসিক এলাকা এবং শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন শেখ রাসেল শিশু উদ্যানের অবস্থান।
 
স্থানীয় নাট্যকর্মীরা নিজেরা চাঁদা তুলে পথনাটকের জন্য উদ্যানে একটি মুক্তমঞ্চ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সেই মঞ্চ ও জরাজীর্ণ। দেখভাল এবং সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়ছে উদ্যানে সীমানা প্রাচীর। এই নিয়ে শ্রীমঙ্গলের সাংস্কৃতিককর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ আর হতাশা।
 
বৈশাখী মেলা উদযাপন সংগঠন ‘অনুশীলন চক্র’ এর সদস্য সচিব কামরুল হাসান দোলন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রতি বছর তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করে থাকি শেখ রাসেল শিশু উদ্যানে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে উদ্যানের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই উদ্যানের মাঠটি পানিতে ভরে উঠে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এবারও আমরা এখানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করতে পারবো না।
 
শ্রীমঙ্গলের সংস্কৃতিকর্মী এবং সারগাম সঙ্গীত বিদ্যালয়ের অন্যতম কর্ণধার মোমিনুল হোসেন সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা যতদূর জানি, উদ্যানের জায়গাটি অ্যানিমি প্রপার্টি (অর্পিত সম্পত্তি) ছিল। এরপর সরকার অধিগ্রহণ করে জায়গাটি সরকারে খতিয়ানে নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে এলাকার সংস্কৃতিকর্মীদের সহযোগিতায় এখানে একটি মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হয়। ২০১১ সালে তৎকালীন চিপ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. এমএ শহীদ এবং বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুজনেই এটিকে শেখ রাসেল শিশু উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেন। আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা এখানে বর্ষবরণসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছি।  
 
তিনি আরও বলেন, উদ্যানটি সংস্কারের নামে এখানে কয়েকবার মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো একটি টাকাও উদ্যানের  উন্নয়নের নামে খরচ করা হয়নি। শেখ রাসেল শিশু উদ্যানটিকে সত্যিকারার্থে শিশুদের বিনোদনের জন্য গড়ে তুলতে আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
 
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। উদ্যানটি দেখতে যাবো। শেখ রাসেল শিশু উদ্যানে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তাও করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৯
বিবিবি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।