ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দৃশ্যমান রূপসা রেলসেতু, ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৯
দৃশ্যমান রূপসা রেলসেতু, ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন পুরোদমে এগিয়ে চলছে রূপসা রেলসেতু নির্মাণ কাজ, শেষ হবে ২০২০ সালের মার্চে। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনার রূপসাপাড়ে কর্মযজ্ঞের উৎসব চলছে। এটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের উৎসব। দিনরাত কাজ চলছে নদীর দুইপাড়ে। সেখানে পুরোদমে চলছে রূপসা রেলসেতু নির্মাণ কাজ। কর্মী, শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের কাজের শব্দে মুখর পুরো এলাকা।

সেতু এখন স্বপ্নের খোলস থেকে বেরিয়ে রূপ নিয়েছে দৃশ্যমান বাস্তবতায়। বহুদূর থেকেও সেতুর অবয়ব চোখে পড়ছে।

প্রতি মুহূর্তেই এগিয়ে চলছে স্বপ্নের বিনির্মাণ। নদী শাসন ও পাইলিংয়ের পর উঠতে শুরু করছে পিলার। আর নির্মাণ স্থলে স্প্যান বসানোর পর বোঝা যাচ্ছে কেমন হবে, খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের রূপসা রেলসেতুর অবয়ব।

এরইমধ্যে সেতুর ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িতরা।  

সেতুর পশ্চিম পাড় বটিয়াঘাটা উপজেলার পুটিমারী ও পূর্ব পাড় খাড়াবাদ এলাকায় দিন-রাত অবিরাম চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। কাঙ্ক্ষিত গতিতেই এগিয়ে চলছে কাজ।

দিন যতই যাচ্ছে রূপসার বুকে একের পর এক খুঁটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। নদীর প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে উভয় প্রান্তে চলছে নির্মাণযজ্ঞ।

পাইল স্থাপনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ভারী সব যন্ত্রপাতি। পুরোদমে পাইল স্থাপন ও পিলার তৈরির কাজ নিয়ে কর্মযজ্ঞ চলছে বহুল প্রত্যাশিত রূপসা রেলসেতু নির্মাণ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। নির্মাণ কাজ শেষে ২০২০ সালের মধ্যে খুলনা ও মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে সারাদেশের রেল যোগাযোগ।  

ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুলনা-মোংলা রেললাইন চালু হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

এদিকে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমের আগেই শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি খুলনার প্রকল্প অফিসের সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রকল্পের অগ্রগতি সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভায় এই নির্দেশ দেন।

বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান বাংলানিউজকে বলেন, সেতু এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে রূপসা রেলসেতুর দৃশ্যমান বাস্তবতা দেখে ভীষণ ভালো লাগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু আজ বাস্তব হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সেতু নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে রূপসা নদীর দুই পাড়ে। নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে বাংলাদেশে প্রথম সুপার স্ট্রাকচারের রেলসেতুর নির্মাণ কাজ। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পুরোদমে এগিয়ে চলছে রূপসা রেলসেতু নির্মাণ কাজ, শেষ হবে ২০২০ সালের মার্চে।  ছবি: বাংলানিউজজানা যায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে ২০১২ সালের নভেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন।

খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ ৩টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি রেলসেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হচ্ছে। স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মোংলা। খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং সেতুর জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা জমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টাব্র রূপসা নদীর ওপর মূল রেলসেতুর কাজ সম্পন্ন করছে।

পুরোদমে এগিয়ে চলছে রূপসা রেলসেতু নির্মাণ কাজ, শেষ হবে ২০২০ সালের মার্চে।  ছবি: বাংলানিউজসংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত। এটি সম্পন্ন হলে মোংলা বন্দরে আরও গতি সঞ্চার হবে। এটি মোংলা বন্দরের সঙ্গে খুলনা তথা সমগ্র বাংলাদেশের রেলসংযোগ তৈরি করবে। কম খরচে ভারত, নেপাল ও ভুটানে মালামাল পরিবহন সহজ হবে। বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সহজে সুন্দরবণ ভ্রমণ করতে পারবেন।

রূপসা রেলসেতুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন ম্যানেজার সুব্রত জানা বাংলানিউজকে বলেন, অবিরাম চলছে রূপসা রেলসেতুর কাজ। সেতু নির্মাণে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে রূপসা নদীর দুইপাড়ে। নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে বাংলাদেশে প্রথম সুপার স্ট্রাকচারের রেলসেতুর নির্মাণ কাজ।

তিনি আরও বলেন, সিঙ্গেল ব্রডগেজের এ সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। ৮৮৪টি পাইলের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৮৪৬টির। পিয়ার ক্যাপ ১৪৪টির মধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। ১৪৩টি স্প্যানের মধ্যে ৫৪টি বসানো হয়েছে। পাইল ক্যাপ হয়েছে ১৪৪টির মধ্যে ২৫টির। সোমবার পর্যন্ত মোট সেতুর ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হবে ২০২০ এর মার্চে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৯
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।