ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ফেনীর দগ্ধ ছাত্রীর চিকিৎসায় ঢামেকে ৯ সদস্যের বোর্ড

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৯
ফেনীর দগ্ধ ছাত্রীর চিকিৎসায় ঢামেকে ৯ সদস্যের বোর্ড

ঢাকা: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে আগুনে ঝলসে দেওয়া ওই ছাত্রীর চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নয় সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

রোববার (৭ এপ্রিল) দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট প্রকল্পের পরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ এই বোর্ড গঠনের কথা বাংলানিউজকে জানান। সেই ছাত্রী ঢামেকের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।

ডা. আজাদ জানান, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত দুইবার বোর্ডের সদস্যরা সেই ছাত্রীকে চিকিৎসা দিয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। গলা থেকে শরীর, দুই হাত, পা, সব জায়গায় পোড়া আছে। পাশাপাশি তার শ্বাসনালীও পুড়েছে। রোগী একটু স্টেবল হলে দু’একদিন পর আমরা অস্ত্রোপচারের দিকে যাবো।

শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে ফেনী থেকে স্বজনরা একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে ওই ছাত্রীকে ঢামেকে নিয়ে আসে। ঢামেক বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলানিউজকে জানান, ছাত্রীর পা থেকে গলা পর্যন্ত ৭৫ শতাংশের বেশি দগ্ধ হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গত ২৭ মার্চ (বুধবার) ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন বলে মামলা দায়ের হয়। এর প্রেক্ষিতে সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ওই ছাত্রীর ভাই বাংলানিউজকে বলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগে করা মামলার জেরে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার পক্ষের কয়েকজন মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে আমার বোনের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন তার আর্তনাদ শুনে মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা ছাদে ছুটে যায়। তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর জেলা সদর হাসপাতাল, সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেকে নিয়ে আসা হয়।

ওই ছাত্রীর ভাইয়ের ভাষ্যে, ২৭ মার্চ বেলা পৌনে ১২টার দিকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার পিয়ন নুরুল আমিনকে দিয়ে সেই ছাত্রীকে নিজের কক্ষে ডেকে নেন। তখন সেই ছাত্রী নিজের সঙ্গে আরও ৩-৪ জন বান্ধবীকে নিয়ে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকতে চাইলে সিরাজউদ্দোলা অন্যদের ঢুকতে না দিয়ে কেবল সেই ছাত্রীকে নিয়ে যান। এরপর দরজা আটকে তিনি ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। এমনকি পরীক্ষার আধঘণ্টা আগে তাকে প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে জানিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর সিরাজউদ্দৌলা ওই ছাত্রীর শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করলে সেখানে কিছুক্ষণ ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে বাইরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায়। তখন খবর পেয়ে মাদ্রাসায় থাকা ওই ছাত্রীর ছোট ভাই অধ্যক্ষের কক্ষে ছুটে যায়। অধ্যক্ষ তখন তাকে জানান, তার বোন অসুস্থ। সেজন্য ছুটির আবেদন করতে এসে পড়ে যায়।

সেখান থেকে ওই ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে ওই ছাত্রী কিছুটা সুস্থ হয়। তখন সে স্বজনদের জানায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিলেন। এরপরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর মাদ্রাসা অধ্যক্ষই উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ফোন করেন। আওয়ামী লীগের নেতা পুলিশসহ মাদ্রাসায় যান। তবে মাদ্রাসায় গিয়ে সব ছাত্র-ছাত্রীর মাধ্যমে সত্য ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ অধ্যক্ষকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় পরের দিন সিরাজউদ্দৌলাকে আদালত পাঠানো হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়।

দগ্ধ করার ঘটনার বর্ণনায় ওই ছাত্রীর ভাই জানায়, শনিবার আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিলো তার বোনের। সকালে মাদ্রাসায় গেলে একজন সেই ছাত্রীকে বলে যে, তার এক বান্ধবীকে কারা যেনো ছাদে মারধর করছে।  এ কথা শুনে সে তখনই সেখানে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে বোরকা পরা চারজন ওই ছাত্রীকে ঘিরে ধরে এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। এই চাপ প্রত্যাখ্যান করায় সেই চারজন প্রথমে তাকে কিল-ঘুষি মারে। এক পর্যায়ে তারা সেই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ছাত্রীর চিৎকার শুনে সেখানে ছুটে যান পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রাসেল ও মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোস্তফা। পরে তারা ছাত্রীর গায়ে কার্পেট জড়িয়ে আগুন নেভান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৯
এজেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।