ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছাত্রীকে আগুনে হত্যাচেষ্টা: বিনা নোটিশে বন্ধ মাদ্রাসা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৯
ছাত্রীকে আগুনে হত্যাচেষ্টা: বিনা নোটিশে বন্ধ মাদ্রাসা .

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতরে এক ছাত্রীকে (১৮) গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার জেরে বিনা নোটিশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মাদ্রাসাটি।

রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল ৭টার দিকে শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় ক্লাস করতে গেলে ফটকে তালা দেখে ফিরে যায়। স্থানীয়রা বলছেন, বিনা নোটিশে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি মো. রুহুল আমিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন।

 

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ফেনী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চাই এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু বিচার হোক। তবে মাদ্রাসাটি বন্ধ থাকলে অন্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা-পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে। এজন্য আলাপ-আলোচনা করে মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

সকাল ৯টার দিকে ওই মাদ্রাসার সামনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকায় ক্লাস করতে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। যদিও রোববার কোনো পরীক্ষা ছিল না, তবে সোমবার (৮ এপ্রিল) সারাদেশের মতো এখানেও একটি বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছে, এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক- সেটা তারা চায়, তবে তাদের মাদ্রাসাটি যেন খুলে দেওয়া হয়।

গত ২৭ মার্চ (বুধবার) ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন বলে মামলা দায়ের হয়। এর প্রেক্ষিতে সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এরপর শনিবার (৬ এপ্রিল) সকালে মাদ্রাসাটির পরীক্ষাকেন্দ্রে ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। এর পর প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষকসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।  

দগ্ধ ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, ওই মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের জন্য সে ছাত্রীকে চাপ দেওয়া হয়েছিল। রাজি না হওয়ায় তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ফেনী সদর হাসপাতালে। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে ওই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছাত্রীর শরীরের ৮০ শতাংশই পুড়ে গেছে।

ঘটনার বর্ণনায় স্বজনরা জানান, সকাল পৌনে ১০টার দিকে ওই ছাত্রী পরীক্ষার হলে বসে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সেসময় এক ছাত্রী এসে তাকে বলে, ‘পাশের চারতলা ভবনের ছাদে তোমার বান্ধবীকে মারধর করা হচ্ছে’। এ কথা শুনে সে তখনই সেখানে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে বোরকা পরা চারজন ওই ছাত্রীকে ঘিরে ধরে এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। এই চাপ প্রত্যাখ্যান করায় সেই চারজন প্রথমে তাকে কিল-ঘুষি মারে। এক পর্যায়ে তারা সেই ছাত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ছাত্রীর চিৎকার শুনে সেখানে ছুটে যান পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রাসেল ও মাদ্রাসার অফিস সহকারী মোস্তফা। পরে তারা ছাত্রীর গায়ে কার্পেট জড়িয়ে আগুন নেভান।  

এদিকে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গত ২৯ মার্চ তার অনুগত শিক্ষার্থী ও সোনাগাজী পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ একটি পক্ষ বিক্ষোভ করে। এতে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের একটি অংশও ছিল। ২ এপ্রিল আবার অধ্যক্ষের মুক্তি চেয়ে তার অনুগতরা বিক্ষোভ করে।

সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক নূরুল আফছার, আলিম পরীক্ষার্থী আরিফুর রহমান ও অফিস সহকারী মোস্তফাকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৯
এসএইচডি/আরআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ