ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অগ্নিকাণ্ডে সেলফি-ভিড়! অবাক লাগে: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৯
অগ্নিকাণ্ডে সেলফি-ভিড়! অবাক লাগে: প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ছবি: পিআইডি

ঢাকা: অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে অযথা ভিড় জমানো ও অনেকের সেলফি তোলার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সত্যি এটা আমার কাছে খুব অবাক লাগে। বাংলাদেশের মানুষের এই মানসিকতাটা পরিবর্তন করতে হবে। 

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগুন লেগেছে দুনিয়ার লোক সেখানে গিয়ে হাজির।

ফায়ার সার্ভিস ঢুকতে পারে না। মানুষ যেতে পারে না। এটা কোন ধরনের ব্যাপার। সবাই দেখতে যায়, সেলফি তোলে, ছবি তোলে, এখানে সেলফি তোলার কি হলো এটা আমি বুঝতে পারি না।

তিনি বলেন, সেলফি না তুলে কয়েক বালতি পানি নিয়ে আসুক। বা আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা করুক। উদ্ধারের কাজ করুক। সেটা না করে, সেলফি তুলে কি আনন্দ- সত্যি এটা আমার কাছে খুব অবাক লাগে। বাংলাদেশের মানুষের এই মানসিকতাটা পরিবর্তন করতে হবে।

সম্প্রতি বনানী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সময় রাস্তা বন্ধ করে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় আগুন নেভানো ও উদ্ধার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সে সময় অনেককে সেলফি তুলতে দেখা যায়। কিছু কিছু মিডিয়াকর্মীও রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সম্প্রচার করেন। অনেক মানুষের অযথা ভিড়ের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধাসহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। তবে এই শ্রেণীর বাইরে দায়িত্বশীল অনেক মানুষ আগুন নেভানো ও উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করেছেন। অন্য অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে এরকম চিত্রই বেশি দেখা যায়।  

আরও পড়ুন>>>আমেরিকার সিকিউরিটি অ্যালার্ট কেন, বলেনি: প্রধানমন্ত্রী 

যে মানুষগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে আগুন নেভাতে ও উদ্ধার কাজে সহায়তা করেছেন তাদের মহৎ কাজের জন্য সাধুবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধুবাদ জানাবো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসেছে। তারা ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করেছে, ফায়ার সার্ভিসকে রাস্তা করে দিয়েছে। যারা প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক তারাও কাজ করেছে। সাধারণ মানুষদের অনেকেও দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করেছে। যারা অযথা ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে, তারা দাঁড়িয়ে না থেকে জায়গাটা খালি রাখলেও উদ্ধারকারীদের জন্য কাজ সহজ হয়। মানুষ সব সময় দায়িত্বশীল আচারণ করবে এটাই আমরা চাই।

মিডিয়াকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিডিয়াতে যখন দেখায় মানুষ আরো বেশি আকর্ষণ হয়, আরো বেশি ছুটে যেতে চায়। সেখানে মিডিয়ার একটা ভূমিকা রয়েছে।

অনিয়মের বিরুদ্ধে সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ আগুন লাগলে দায়িত্ব হচ্ছে ফায়ার ব্রিগেট আগুন নেভাবে। কিন্তু আগুন যাতে না লাগে যারা দালানগুলো বানায়, যারা বসবাস করে যারা ব্যবহার করে তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্বটাই পালন করা হয় না। আর সব কিছু হলে দোষ হলো সরকারের। আমরা বারবার বলি, যখন ডিজাইন দেওয়া হয় তখনো বলি।  

শেখ হাসিনা বলেন, যারা স্থাপনাগুলো ব্যবহার করছেন তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব, যেন সেখানে আগুন না লাগে। অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা যেন থাকে। আর সঙ্গে সঙ্গে কি করতে হবে সেটাও যেন দেওয়া থাকে। প্রতি ইঞ্চি জায়গা লাভজনক ব্যবহারের জন্য নিজেদের সর্বনাশটা যেন কেউ ডেকে না আনে। সর্বশান্ত না হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দালানগুলো এমনভাবে বানানো হয় যে তার ফায়ার এক্সিট, ইন্টেরিয়র ডেকারেশন করতে গিয়ে ফায়ার এক্সিট বন্ধ। সেখান দিয়ে কারো ওঠার উপায় নেই, নামারও উপায় নেই। মার্কেটগুলোতে ফায়ার এক্সিট মাল রাখার জন্য বা স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।  

ঢাকার জলাধারগুলো ধ্বংসের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, দুঃখজনক ঢাকায় এতো খাল ছিল, এতো পুকুর ছিল, অথচ এখন নেই। পানির অভাব। একটা পর্যায়ে পানির জন্য হাহাকার। যদিও ওয়াসার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পানি আছে।  
তিনি বলেন, যারাই কোনো স্থাপনা করবে সেখানে যেন জলাধার টিকে থাকে। আর পুকুর দেখলে তার মধ্যে দালান করা এটাও একটা প্রবণতা।  

জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, গুলশান লেক এখন যা আছে তার দ্বিগুণ চওড়া ছিল। একেকজন ক্ষমতায় এসেছে, জিয়া এসেছে অর্ধেক ভরাট করে প্লট বানিয়ে দিয়েছেন। এরশাদ এসেছেন প্লট বানিয়েছেন। খালেদা জিয়া এসে প্লট বানিয়েছেন। এভাবে বানাতে বানাতে লেকের অর্ধেক আছে। আর বনানী লেকটাতো বন্ধই। ...এভাবে জলাধারগুলো একেক করে বন্ধ করা। এটাও বোঝা উচিত যে আগুন লাগলে পানি নেই। ভূমিকম্প হলে কোথাও গিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। তাহলে অবস্থাটা কি দাঁড়ালো।  

অগ্নিদুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের প্রায় সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৯
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।