ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মেঘনায় বিলীন হচ্ছে চেয়ারম্যান বাড়ি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১৯
মেঘনায় বিলীন হচ্ছে চেয়ারম্যান বাড়ি মেঘনার মুখে চেয়ারম্যান বাড়ি। ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: বাগানের সারি-সারি নারিকেল-সুপারি গাছ ভেঙে পড়ছে নদীতে। ঢেউ আছড়ে পড়ছে ঘরের পিড়েতে (মেঝে)। ঢেউয়ের আঘাতে আঘাতে ভাঙছে ঘর-ভিটে। বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতঘর। তলিয়ে গেছে উঠানের একাংশ। উঠানের ওই প্রান্তে ফলে ফলে ভরে থাকা জাম্বুরা গাছটির দিকে আসছে নদী। গাছটির পাশেই প্রয়াত চেয়ারম্যানের বসতঘর। ধেঁয়ে আসা রাক্ষুসে মেঘনা ওই ভিটে মাটিও খাবে।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে চর ফলকন ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী চেয়ারম্যান বাড়ি বিলীন হচ্ছে। বাড়ির ৮ পরিবারের মধ্যে ৫ পরিবারের ভিটেমাটি গত এক সপ্তাহের ভাঙনে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে।

ভাঙনের মুখোমুখি বাকি তিনটি পরিবারও। ভাঙছে আশ-পাশের বাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তা।

চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক (ইউপি) চেয়ারম্যান ডা. ওবায়েদুল হকের বাড়ি ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। বাড়ির সামনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাঁ, মসজিদ-মক্তব, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও পারিবারিক কবরস্থান। এ সবই এখন ভাঙনে মুখে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে আগামী দুই/চার সপ্তাহের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে চেয়ারম্যান বাড়িসহ অন্যসব স্থাপনা।  
মেঘনা গিলছে গাছপালা-।  ছবি: বাংলানিউজ
মৃত ডা. ওবায়েদুল হক চর ফলকন ইউনিয়নের প্রায় ৩০ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৩০ বছরের পুরনো বাড়ি এটি। গড়েছেন তার পূর্ব পুরুষরা। পৈত্রিক এ বাড়ির আয়াতন প্রায় ১৩ একর। বাড়িতে চেয়ারম্যানরা পাঁচ ভাইসহ আট পরিবারের বসবাস ছিলো। এছাড়াও নদী ভাঙা অসহায় আরও কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে ওই বাড়িতে।

সম্প্রতি সরেজমিনে চেয়ারম্যান বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনে মুখে পড়ে বিশাল বাগান নদীগর্ভে। বাড়ির ভেতরের পুকুরটি এখন মেঘনা নদীতে। ইতোমধ্যে পাঁচটি পরিবারের বসতঘর ও রান্নাঘরের ভিটে মাটি নদীতে বিলীন হয়েছে। চেয়ারম্যানের ছোট ভাই শাহ আলম বাঘার বসতঘরটি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তাদের ঘরে আত্মীয়-স্বজনদের ভিড়। সবার চোখে মুখে বিষাদের চাপ। শান্তনা দিতে এসেও স্বজনরা যেনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখনও বাড়ির বাকী উঠান ভাঙলো মেঘনা।  

চেয়ারম্যানের স্মৃতিবিজড়িত ঘরে থাকেন তার বড় ছেলে এনামুল হক ও তার স্ত্রী গোলেনূর বেগম। শ্বশুরের ভিটে মাটি ছেড়ে যেতে হবে এমন পরিস্থিতিতে শোকে পাথর হয়ে আছেন গোলেনূর। শাড়ির আঁচল দিয়ে বার বার চোখের পানি মুছতে মুছতে যেনো ক্লান্ত।

চেয়ারম্যানের পুত্রবধূ গোলেনূর বেগম বলেন, নদী ভাঙনে সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনকে আলাদা করে দিচ্ছে। হারাতে হচ্ছে প্রতিবেশীদের। আশ-পাশের বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে আর  তাদের দেখা হবে না। শ্বশুর-শাশুড়ির কবরও ভাঙনের মুখে। এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

চেয়ারম্যানের নাতি আশরাফুল হক শামীম বলেন, এ বাড়িতে তার জন্ম ও বেড়ে উঠা। বাড়ির উঠানটাই ছিলো তার খেলার মাঠ। অন্যবাড়ির সব শিশু-কিশোররা এখানে আসে খেলা করতো। শত স্মৃতি জড়িয়ে আছে বাড়িতে। এখন সেই উঠান ভাঙছে। ভিটেমাটি হারানো সত্যিই বেদনার।
মেঘনা গিলছে বসতঘর।  ছবি: বাংলানিউজ
চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান, হাজী হারুনুর রশিদ বলেন, সারাবছর ধরে মেঘনা নদী ভাঙে। গত এক মাসে চর ফলকন গ্রামের বেশ কয়েটি পারিবার ভাঙনে মুখে পড়ে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ডা. ওবায়েদুল হকের বাড়িটি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

গত তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মেঘনা নদী ভাঙন। ভাঙনে, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র মসজিদ-মন্দিরসহ অনেক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। ভয়াবহ ভাঙনে মারাত্মক হুমকির মুখে কমলনগর উপজেলা কমপ্লেক্সসহ আরও বহু স্থাপনা।

বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৯
এসআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।