ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর একগুচ্ছ নির্দেশনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৯
অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর একগুচ্ছ নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ফটো

ঢাকা: রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নি দুর্ঘটনায় নিহতের প্রতি শোক জানাতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে অন্তত ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (০১ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এইসব নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠকে শেষে ব্রিফ্রিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের একথা জানান।


 
বৈঠকে একটি শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত এবং ১৩০ জন আহত হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিসভা শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
 
আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কিছু অনুশাসন প্রদান করেন বলে জানান মোহাম্মদ শফিউল আলম।  
 
একগুচ্ছ নির্দেশনা

বহুতল ভবন যখন তৈরি করা হবে, তখন ফায়ার সার্ভিস সাধারণত একটা ক্লিয়ারেন্স দেয়। ক্লিয়ারেন্সই যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে পরিদর্শন করে এটা ভায়াবেল কিনা- এটা নিশ্চিত করা।
 
অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়মিত পরিদর্শন করা এবং ফায়ার সার্ভিসের যে অনুমোদন দেয়া হয় সেটি শিল্পের মতো প্রতিবছর একবার করে নবায়ন করা যায় কিনা- সেটি বছরে বছরে দেখা।
 
বিল্ডিং কোড অনুসরণ করা।
 
এক থেকে তিন মাসের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে ফায়ার ড্রিল বা মহড়া করা, যেন সবাই সচেতন হয়।
 
আগুনে শ্বাস বন্ধ হয়ে অনেকে মারা যায়, আগুনের চেয়ে ধোয়ার কারণে মানুষ মারা যায়। পৃথিবীর অনেক দেশেই ধোয়া কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেজন্য কিছু বিকল্প ব্যবস্থা আছে। ধোয়া যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে আগুনে মৃত্যুর হার অনেক কমে যাবে। এই ধোয়াটা বন্ধ করার টেকনিটক আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে ব্যবহার করা হয়, সেটা আমরা কীভাবে নিতে পারি।
 
পানির অভাবের কারণে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভাতে পারে না, পানির অভাবজনিত সমস্যা তৈরি হয়েছে। ঢাকা শহরের যে খাল, ডোবা, ঝিল ছিল এগুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে যেখানে সম্ভব জলাশয় বা জলাধার তৈরি করে পানির অভার পূরণ করা।
 
লেকগুলো সংরক্ষণ করা, যেমন ধানমন্ডি লেক, গুলশান লেক এগুলোকেও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা।
 
ফায়ার সার্ভিস বিভাগের তিনটি ল্যাডার আছে, যা ২৩তলা পর্যন্ত যেতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের এই সক্ষমতা বা সংখ্যা বাড়াতে হবে।
 
যারা আর্কিটেক্ট আছেন, তারা যেন ভবনের প্ল্যান আমাদের পরিবেশ এবং বাস্তবতার দিকে চিন্তা-ভাবনা করে করে। যেমন- ঘরগুলো যেগুলো তৈরি করা হয় সেগুলো অনেকটা ম্যাচ বাক্সের মতো অর্থাৎ এখানে কোন দরজা-জানালা বাইরে থাকে না। যেমন- গ্লাস দিয়ে ব্লকড, এসি করা; এটা ভেঙে বের হতে হয়েছে এবার। এজন্য যদি জানালা-দরজা-বারান্দা থাকে সেখানে থাকার সুযোগ হয়।
 
ফায়ার এক্সিট আমাদের দেশে কাজ করে না, এটা নিশ্চিত করা প্রতিটি দালানে। সব ভবনে শতভাগ ফায়ার এক্সিট নিশ্চিত করা।
 
অনেক জায়গায় ইলেকট্রনিক সিস্টেমে দরজা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, ফায়ার এক্সিটগুলো সব সময় খোলা থাকবে। এটা যাতে মেন্যুয়ালি হ্যান্ডেল করা যায়।
 
অনেক দেশে তারপোলিং সিস্টেমে মানুষ ঝুলে নামতে পারে, এটা যেন থাকে। অর্থাৎ বড় কাপড়ে ঝুলে নেমে যেতে পারে।
 
বিশেষ করে হাসপাতাল এবং স্কুলগুলোতে অবশ্যই বারান্দা বা খোলা জায়গা রাখা।
 
লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যাওয়ার কারণে অনেকে আহত হয়েছে এবং মারা গেছে।
 
আগুনের সময় অনেকেই লিফট ব্যবহার করেন, সারা বিশ্বেই আগুনের সময় লিফট ব্যবহার করা হয় না। এটা মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে, সচেতনতা বাড়াতে হবে।
 
প্রতিটি ভবনে একাধিক এক্সিট যেন থাকে, অনেক সময় মানুষ হুড়োহুড়ি করে নামে, এটা যেন না হয়।
 
ঢাকা শহরে ২৪টি টিম ভবনগুলো পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেবে, যেটা ঝুঁকিপূর্ণ সেটা দরকার হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বৈঠকে জানিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
 
এফ আর টাওয়ারে অগ্নি দুর্ঘটনার পর তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দোষীদের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৯/আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা
এমআইএচ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।