ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অগ্নিকাণ্ড: নিছক দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্র?

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৯
অগ্নিকাণ্ড: নিছক দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্র? চুড়িহাট্টা, বনানী ও ডিএনসিসির অগ্নিকাণ্ড

ঢাকা: ৩৮ দিনের ব্যবধানে রাজধানীতে তিনটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ নাগরিক ও ভুক্তভোগীদের মাঝে। এটা কী নিছকই কোনো দুর্ঘটনা নাকি এর পেছনে রয়েছেন ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার অংশ! 

অগ্নিকাণ্ডে ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, অল্প ক’দিনের মাঝেই এ ধরনের বড় বড় দুর্ঘটনা বেশ সন্দেহজনক। এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

 

গত ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহিদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জনের প্রাণহানি ঘটে। অনেকেই অগ্নিকাণ্ডের বিভিন্ন কারণের কথা জানালেও তা স্পষ্ট নয় এখনও।  

এর সাত দিনের মাথায় গভীর রাতে আগুন লাগে মিরপুর ভাষানটেকের জাহাঙ্গীর বস্তিতে। এরপর গত ২৮ মার্চ আগুন লাগে বনানীর এফ আর টাওয়ারে; এতে মারা যান ২৬ জন।  

সর্বশেষ শনিবার (৩০ মার্চ) সকালে গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেট এবং দুপুরে একই এলাকার একটি বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।  

খুবই অল্প সময়ের ব্যবধানে এমন কয়েকটি ঘটনা জনমনে ‘ষড়যন্ত্র’কে আরও ঘণীভূত করে তুলছে।

শনিবার সকালে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) এক অনুষ্ঠানে এমন সন্দেহের কথা জানিয়েছেন খোদ মেয়র সাঈদ খোকনও।  

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাঈদ খোকন বলেন, ‘সম্প্রতি সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডগুলি নিছক দুর্ঘটনা নাকি এর পেছনে কোনো নাশকতা আছে  তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ কারণে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ’

‘অনেক সময় ব্যবসায়ীদের মধ্যে মনোমালিন্য বা ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। তাই এগুলো গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখতে হবে,’ বলেন তিনি।  

একই সময়ে, একই স্থানে অগ্নিকাণ্ড:

২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারিতেও আগুন লেগেছিল গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে। শনিবারও প্রায় একই সময়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।  

অগ্নিকাণ্ডের পর প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, ওই বছর মার্কেট সংলগ্ন কাঁচাবাজারের যে স্থানটিতে আগুন লেগেছিল, এবারও প্রায় সেখানেই সূত্রপাত হয় আগুনের। এছাড়া সেবারও ভোরের দিকে আগুন লাগে, এবারও প্রায় একই সময়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।  

মার্কেটের ১০১ নম্বর দোকান মেহেরান এন্টারপ্রাইজের মালিক দুই ভাই। তাদের একজন মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমি দোকানে রাতে ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ছিলাম। তখন পর্যন্ত আগুন লাগার কিছু দেখিনি।  

‘এর আগে ২০১৭ তেও সকালে মার্কটে আগুন লাগে। প্রতিবার ভোরবেলায় কেন আগুন লাগে? সকালে আমার দোকান খোলার কথা  ছিলো। প্রতিবার একই সময় কীভাবে আগুন লাগে?’

তার ভাই মিজানুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এখান থেকে উচ্ছেদ করতেই এই আগুন আগুন খেলা হয়। এখানে নাকি বহুতল ভবন করবে। এতে তো অনেকের পকেট ভরবে। নিঃস্ব হয়েছি আমরা। সেবারও হয়েছিলাম। আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আবারও আমাদের সর্বস্ব গেল। দোকানে অন্তত ২০ লাখ টাকার চকলেট ছিল।  

‘যদি ভবন করাও হয় তাতেও তো আমাদের ক্ষতি। ওই সময় তো দোকান থাকবে না। আমরা খাবো কী? আমাদের আয়ের  উৎস তো এই এক দোকানই,’ আক্ষেপ করে বলছিলেন তিনি।  

গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা আজমল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বনানীর পরপরই গুলশানের এই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল এই অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে থাকতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিৎ।  

জানা যায়, গত ৮ বছর আগে বনানীর ৩২ নম্বর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের এফ আর টাওয়ারেও আগুন লাগে। ডিএনসিসি মার্কেট এবং এফ আর টাওয়ারের আগের দুইটি ঘটনার সময় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের সুপারিশ করা হয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে।  

কিন্তু তার অনেক কিছুই মানা হয়নি। এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়েই মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে এই দুইটি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের কোনো ষড়যন্ত্র হয়েছে কি না সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।

ব্যবধান দুই থেকে সাত দিন:
ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছিলো চুড়িহাট্টা ও মিরপুরের ভাষানটেক বস্তির ঘটনা। প্রথমটিতে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি মানুষ নিহত হয় ৭০ জন।  

এর ঠিক ৭ দিন পরেই ভাষানটেকের ঘটনায় মানুষ হতাহত না হলেও পুড়ে যায় বস্তির অন্তত এক হাজার ঘর।

অনেকটা মিল রেখেই যেন, এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দুই দিনের মাথায় আগুন লাগে গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজারে। এফ আর টাওয়ারের ঘটনায় নিহত হন ২৬ জন আর গুলশানের ঘটনায় পুড়ে ছাই হয় প্রায় দুই শতাধিক দোকান। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে এতসব মিল থাকাকে ‘কাকতালীয়’ মানতে নারাজ অনেকেই।

এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়াতেও দ্বিধা বাড়ছে অনেকের মনে। ষড়যন্ত্রের প্রভাবক হিসেবে এই অপ্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।  

তারা বলেছেন, এসব তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়াতে অগ্নিকাণ্ডের কারণ, সূত্রপাতের সময় ও উৎস; এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাচ্ছে না। তাই সেগুলো পরিকল্পিত নাকি দুর্ঘটনা সেটিও খোলাসা নয়। একই সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারী এই ভেবে উৎসাহিত হন যে, তদন্তের প্রতিবেদনে যাই থাকুক তার কিছুই প্রকাশিত হবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ২২১২ ঘণ্টা,  মার্চ ৩০, ২০১৯
এসএইচএস/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।