ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নাসিরনগরে অতিরিক্ত অর্থ না দিলে মিলছে না জন্ম সনদ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৯
নাসিরনগরে অতিরিক্ত অর্থ না দিলে মিলছে না জন্ম সনদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: নাসিরনগরের বুড়িশ্বর ইউনিয়ন পরিষদে অতিরিক্ত অর্থ না দিলে মিলছে না জন্ম সনদ। গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ জাতীয় সনদপত্র আনতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এজন্য ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক মকবুলকে দায়ী করছেন গ্রামের লোকজন। 

যদিও সরকারিভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে এক থেকে পাঁচ বছর বয়স হলে ২৫ টাকা। আর পাঁচ বছর থেকে মৃত্যু আগ পর্যন্ত ৫০ টাকা।

ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষেরই অভিযোগ, চেয়ারম্যান মুকবুল নির্বাচিত হওয়ার পর ইউপি সদস্য ও সচিবের সঙ্গে যোগসাজশে এ কাজ করা হচ্ছে। সনদপত্র আনতে গেলে হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। বেশি টাকা না দিলে সনদ দিতে অনীহা প্রকাশ করে। এমনি কি বয়স্ক ভাতার ক্ষেতেও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুড়িশ্বর গ্রামের বাসিন্দা অলি আহাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার মেয়ের জন্ম সনদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলাম। জন্ম সনদের জন্য চেয়ারম্যান আমার কাছে এক হাজার ৭৫০ টাকা দাবি করেন। এতো টাকা লাগবে কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক টাকাও কম হবে না। একপর্যায়ে ২০ টাকা কমে এক হাজার ৭৩০ টাকা দিয়েই সনদ আনতে হয়েছে। ’
বেলা সাড়ে ১২টা বাজলেও চেয়ারম্যান ও সচিবের দেখা মিলেনি
লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা জুনায়েদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাইয়ের জন্ম সনদের জন্য গিয়েছিলাম ইউনিয়ন পরিষদে। নিবন্ধনটি করতে সরকারি ফি ৫০ টাকা হলেও ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে এক হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধনটি করতে হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় আত্মীয়-স্বজনরা গেলেও হাজার টাকা করে রাখা হয়েছে। ’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গ্রামের যারা বয়স্ক বা বিধবা ভাতা পাওয়ার যোগ্য তাদের না দিয়ে ওই সচিবের পরিচিত লোকজনদের দিচ্ছেন। ’

গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি নূর মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভোটের সময় আমাদের বলছে জন্ম সনদ নিতে কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না। এখন জন্ম সনদ আনতে গেলে সরকারি ফি বাদে এক থেকে দেড় হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন এটা সরকারি ফি না দিলে হবে না। ’

প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ আব্দুল হাই বলেন, ‘আমার বাড়ি ঘর নেই। অন্য এক জনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কোনো রকমে থাকছি। বয়স্ক বাতার জন্য কয়েকবার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে ছিলাম। প্রতিবারে চেয়ারম্যান না করে দিয়েছেন। ’

সরেজমিনে ওই ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১২টা বাজলেও চেয়ারম্যান ও সচিব অফিসে আসেন নি। সব সরকারি অফিসে নিয়মিত আসার জন্য অত্যাধুনিক বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন ব্যবহার চালু করলেও তা তারা মানছে না।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বুড়িশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের এক অফিস সহকারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘সচিব স্যার বাড়িতে আছেন আসতে দেরি হবে। চেয়ারম্যান স্যার কয়দিন ধরে অসুস্থ তাই আসতে পারছেন না। ’

এসব বিষয়ে বুড়িশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক মকবুলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল কবির বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।